মাহাবুবুর রহমান.
দীর্ঘ ১১ বছরেও শেষ হয়নি কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পাদপিঠ খ্যাত পাবলিক লাইব্রেরীর নির্মাণ কাজ। বার বার আমলা তান্ত্রিক জটিলতাও ঠিকাদারদের গাফেলতীর কারনে প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকার এক পাবলিক লাইব্রেরী কাম অডিটরিয়াম নির্মান কাজ শেষ না হওয়ায় অনেকটা বন্ধ হয়ে পড়েছে কক্সবাজারের সব ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড স্থবির হওয়াতে জেলার যুব সমাজের একটি বড় অংশ মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এদিকে কাল (শনিবার) কক্সবাজার জেলা সফরে আসছেন সংস্কৃতিক মন্ত্রনালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল তিনি জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব এবং সুশীল সমাজের সাথে মত বিনিময় করবেন। তবে সবার আগে পাবলিক লাইব্রেরী নির্মাণ কাজ শেষ করার দাবী জানান জেলার সর্বস্তরের সাংস্কৃতিক কর্মীরা।
কক্সবাজারের অন্যতম নাট্য সংগঠন কক্সবাজার থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদকও বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটারের সদস্য এড,তাপস রক্ষিত বলেন,স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অন্যতম উর্বর ভুমি ছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজার। ৯০ এর সৈরাচার বিরুধী আন্দোলন থেকে শুরু করে জাতিয় আর্ন্তজাতিক যে কোন সংকটে কক্সবাজারের সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং কর্মীরা নাটক,গান, কবিতায় সব সময় ছিল মুখরিত। এই কক্সবাজারেই হয়েছিল বহু জাতীয় এবং আর্ন্তজাতিক আয়োজন। আর এই সব কর্মকান্ডই ছিল কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী পাবলিক লাইব্রেরীকে ঘিরে। ২০০৮ সালের আগেও প্রতিদিন বিকালে পাবলিক লাইব্রেরী মাঠে সাংস্কৃতিক কর্মীদের পদচারনায় মুখরিত ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে যখন পাবলিক লাইব্রেরী ভেঙ্গে নতুন ভাবে করার উদ্দোগ নেওয়া হয়েছে সেই থেকে জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে গ্রহন লেগেছে। কাজ ও শেষ হয় না,পুরু জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডও অনেকটা বন্ধ হওয়ার পথে। মূলত পাবলিক লাইব্রেরীটা শহরের মাঝখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধা,যে কোন সাংস্কুতিক আয়োজনে দর্শক পাওয়া যায়,বাড়তি কোন খরচ লাগত না,আড্ডা দেওয়ার পরিবেশ ছিল সব মিলিয়ে একটি আদর্শ স্থান ছিল। কিন্তু এখন সব কিছু বন্ধ একটি নাটক বা গানের অনুষ্টান করতে চাইলে বীচের পাশে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে যেতে হয়,সেখানে কোন দর্শক যেতে চায় না,বাড়তি খরচ বেশি,যাতায়ত অসুবিধা ফলে কোন অনুষ্টান করা সম্ভব না। তবুও আমরা কক্সবাজার থিয়েটার অনেক কষ্ট করে কিছু অনুষ্টান করেছিলাম। এখন আমাদের একমাত্র দাবী হচ্ছে দ্রুত পাবলিক লাইব্রেরী কাম অডিটরিয়াম নির্মাণ কাজ শেষ করা।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের উপ সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলেন,২০০৮ সালে তৎকালীন উপদেস্টা রাশেদা কে চৌধুরী পুরাতন পাবলিক লাইব্রেরীটি ভেঙ্গে নতুন করে আধুনীক পাবলিক লাইব্রেরী কাম অডিটরিয়াম কাজ উদ্বোধন করেছিলেন। এখানে প্রথমে মন্ত্রনালয় থেকে বাজেট পাওয়া যায়নি,পরে বাজেট দিয়েছে নকশা বা ডিজাইন ঠিক মত হয়নি,পরে ডিজাইন হয়েছে সে পরিমান বরাদ্ধ পাওয়া যায়নি।মাঝখানে কিছু সরাঞ্জম কিনতে কর্মকর্তাদের বিদেশ যাওয়া কথা থাকলেও দীর্ঘদিন মন্ত্রনালয় সেটা অনুমদন না করায় আরো বিলম্ব হয়ে হয়েছে। সর্ব শেষ প্রায় ১০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার এই কাজ বর্তমানে অনেক দূর এগিয়েছে। অবকাঠামোগত কাজের ঠিকাদার বর্তমানে কাজ করছে,সে অনুযায়ী কাজ দ্রুত শেষ হবে। তবে কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগ ও এলজিইডি বিভাগে গিয়ে এ বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায় নি।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম বলেণ,পাবলিক লাইব্রেরী নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকার করনে জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে স্থবিরতা চলে এসেছে এটা চিরন্তন সত্য,কিন্তু পাশাপাশি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চালু থাকলেও সেখানে কোন সহায়ক পরিবেশ নেই,বর্তমানে সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি একেবাবেরই অকেজো হয়ে পড়েছে। আর সেখানে বিভিন্ন একাডেমী,প্রশিক্ষন কেন্দ্র সহ অনেক কিছু থাকার কথা থাকলে তার কিছুই হয়নি।সেখানে স্থায়ী পরিচালক না থাকায় সমস্যা লেগেই থাকে। এছাড়া শিল্পকলা একামেডীর কোন নিজস্ব ভবন না থাকায় সেই প্রতিষ্টান তেমন সফলতার মুখ দেখছে না। খুব দ্রুত এসকল সমস্যার সমাধান না করলে জেলার সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে আরো বিপর্যয়ের মুখে পড়বে। আর সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড না থাকলে জঙ্গিবাদ সহ অসুভ শক্তির আসফালন বাড়তে পারে।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সত্য প্রিয় চৌধুরী দোলন বলেন,মুলত সাংস্কতিক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টান বলেই ১১ বছরেও পাবলিক লাইব্রেরীর কাজ শেষ হচ্ছে না। সেটা যদি কোন বিশেষ প্রকল্প হতো,বা সেটা যদি কোন লাভজনক প্রতিষ্টান হতো ঠিকই এতদিনে সব কিছু হয়ে যেত। কিন্তু বাস্তবতা কেই বুঝেনা,যুব সমাজ যখন ধ্বংসের শেষ প্রান্তে চলে যায় তখন বলে,খেলাধুলা বা সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড বাড়ান তখন সংস্কৃতির মর্যাদা বুঝে। কক্সবাজারে যেখানে ৩ লাখ কোটি টাকার কাজ হচ্ছে সেখানে ১০ কোটি টাকার কাজ শেষ করতে আর কতবছর লাগবে সেটাই আমি জানতে চাই। তাই আমার দাবী থাকবেআগে পাবলিক লাইব্রেরী কাম অডিটরিয়াম নির্মাণকাজটা শেষ করা হউক।
জেলা খেলাঘরের সভাপতি আবুল কাশেম জানান,কক্সবাজারে ১৯ টি খেলাঘরের শাখা সংগঠন আছে। আগে প্রতি ২/৩ মাস অন্তর অন্তুর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা,শিশু মেলা,আনন্দ মেলা,শিশু উৎসব আয়োজন করা যেত কার পাবলিক লাইব্রেরীতে সব সুবিধা ছিল। কিন্তু যখন থেকে পাবলিক লাইব্রেরী বন্ধ তখন থেকে সব কিছু স্থবির হয়ে গেছে। বর্তমানে যারা বিভিন্ন খেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা খেলাঘর থেকে উঠে আসা। কিন্তু সব কিছু বন্ধ থাকায় একটি প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারছেনা।
কক্সবাজার অন্যতম প্রধান নাট্য নির্দেশক স্বপন ভট্টাচার্য্য জানান,পাবলিক লাইব্রেরী বন্ধ করে দিয়ে কক্সবাজারের পুরু সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। ফলে আগে যে প্রজন্ম সাংস্কৃতির সাথে ছিল তারা এখন খারাপ কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তবে আমি একটু অবাক হই যখন দেখি বীচ দখল নিয়ে বা অন্যকোন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন হয় কিন্তু পাবলিক লাইব্রেরী নিয়ে কোন আন্দোলন হয় না। আমি মনে করি সবার আগে পাবলিক লাইব্রেরী নির্মাণ কাজ শেষ করতে হবে।
মন্তব্য করুন