কক্সবাজার রিপোর্ট
অবশেষে দূর্নীতি মামলায় আটকে গেল বুহুল আলোচিত কক্সবাজারে মেডিকেল কলেজের নানান অনিয়ম দূর্নীতির মুল হুতারা। ২০১৭ সাল থেকে শুরু করে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের ফার্নিচার ক্রয়,ভূয়া বিল ভাউচার করে টাকা আত্বসাৎ.মাস্টাররুলে কর্মচারী নিয়োগ করে টাকা আত্বসাৎ,ঠিকাদারের মাধ্যমে কাজ না করে টাকা আত্বসাৎ সহঅনেক অনিয়ম দূর্নীতির তথ্য বহুল সংবাদ প্রচার করা হয়। আর এসব অনিয়মের প্রথম সারিতে নাম উঠে আসে সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ রেজাউল করিম,হিসাব রক্ষক হুররমা আকতার খুকি,এবং বর্তমান অধ্যক্ষ ডাঃ সুভাষ চন্দ্র সাহা সহ আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারীর নাম। তবে বার বারই এসব অনিয়ম দূর্নীতির সঠিক তথ্য প্রচার করতে গিয়ে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের রাজনীতি বিদ,জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক সহ অনেক গুরুত্বপূর্ন ব্যাক্তির বাধার মুথে পড়তে হয় সংবাদকর্মীদের। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা সেই দূর্নীতি বাজদের। অবশেষে জয় হলো প্রকৃত সাংবাদিকতার। আইনী জালে আটকে যাচ্ছে তাদের সাথে সহেযাগিতা সহ মূলহুতারা।
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজের ৩ জন,কক্সবাজার হিসাব রক্ষণ অফিসের ৩ জন সহ মোট ১০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার অনুমোদন দিয়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন দুদক। অভিযুক্তদের মধ্যে আছে কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহা, সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা আক্তার খুকী, কক্সবাজার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, একই দপ্তরের সাবেক এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাশ, পংকজ কুমার বৈদ্য। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আবজাল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা খানমই হচ্ছে মামলার প্রধান। জানা গেছে,আবজাল দম্পতির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘ হলেও প্রথম মামলাটি হচ্ছে ৩৭ কোটি টাকা আত্মসাতের। কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতি কেনার নামে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কাল শুক্রবার মামলা করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার কমিশন ওই মামলার অনুমোদন দেয় বলে জানিয়েছেন দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য।
মামলায় আবজাল হোসেন এবং তার স্ত্রী রুবীনা খানম সহ অন্য আট আসামি হলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ সুবাস চন্দ্র সাহা, সাবেক অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রেজাউল করিম, কলেজের হিসাবরক্ষক হুররমা আক্তার খুকী, কক্সবাজার জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সুকোমল বড়ুয়া, একই দপ্তরের সাবেক এসএএস সুপার সুরজিত রায় দাশ, পংকজ কুমার বৈদ্য এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক উচ্চমান সহকারী খায়রুল আলম।
দুদক সূত্র জানিয়েছে, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে আবজাল দম্পতির দুর্নীতির এই অভিযোগ অনুসন্ধান করেছে দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল। তাদের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিশন মামলার অনুমোদন দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়াই সাবেক অধ্যক্ষ রেজাউল করিম যন্ত্রপাতি কেনার উদ্যোগ নেন। এ জন্য তিনি ক্রয়সংক্রান্ত কাজ করার জন্য কমিটি গঠনের অনুমতি চেয়ে চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদকে চিঠি দেন। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার আগেই অধ্যক্ষ বিভিন্ন কমিটি গঠন করেন। চিঠি দিয়ে বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র চান। পরে বিভাগীয় প্রধানদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র না পেয়েও তিনি পছন্দের ঠিকাদার রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে কার্যাদেশ দেন। এতে বিভিন্ন জনের সহযোগিতার তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে।
রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আবজাল হোসেনের স্ত্রী রুবিনা খানম। তিনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঁচটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন প্রকল্পে স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে যোগ দেন ১৯৯৮ সালে। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় অবসরে গিয়ে রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে ব্যবসা শুরু করেন। আবজালের সঙ্গে বিয়ের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে একচেটিয়া ব্যবসা করার জন্য তাঁরা প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রুবিনা খানম কার্যাদেশ অনুসারে যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করে ভুয়া ও ব্যবহার–অনুপযোগী যন্ত্রপাতি বিভিন্ন দেশের লেবেল লাগিয়ে কক্সবাজার মেডিকেলে সরবরাহ করেন। পরে ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল জমা দিয়ে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। ওই সব যন্ত্রপাতি এখনো ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে।
দুদক বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন বিভাগের সাবেক পরিচালক ও লাইন ডিরেক্টর আবদুর রশীদ অবৈধ ওই কর্মকা- বন্ধ না করে চাহিদাপত্র না পাওয়া সত্ত্বেও আর্থিক ক্ষমতার বাইরে ভেঙে ভেঙে প্রথমে ৩০ কোটি ও পরে সাড়ে সাত কোটি টাকা রহমান ট্রেডকে দিয়ে দেন। এর মাধ্যমে তিনি রুবিনাকে ওই টাকা আত্মসাতে সহায়তা করেন।
অন্য কর্মকর্তারাও অবৈধ এই কর্মকা-ে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়। তাই তাঁদের আসামি করা হচ্ছে।
দুদক জানিয়েছে, আবজালের বিরুদ্ধে প্রথম এই মামলা হচ্ছে। তাঁর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে, তাতে মামলার সংখ্যা হবে অনেক। ওই সব অভিযোগের অনুসন্ধান প্রতিবেদন পেলে মামলা হবে।
মন্তব্য করুন