শিরোনাম :
কক্সবাজারে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্য আটক : উদ্ধার ৭ বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফুটবল : চ্যাম্পিয়ন মহেশখালী রানারআপ চকরিয়া বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন সাংবাদিক মাহীকে ভুল চিকিৎসা: তত্ত্ববধায়ক মোমিনকে বদলি, তিন সদস্য কমিটি গঠন জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত¡বধায়ক ডা: মুমিনের বদলী নতুন আসছেন ডা:মং টিংঞো ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ : ঘোনারপাড়ার নির্মল ধরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা কক্সবাজারে নকল কোর্ট ফি বিক্রি চক্রের ২ জন আটক রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধে স্থানীয়দের সর্বাত্মক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে সিরাজ আহমদ নাজিরের ২০ তম মৃত্যু বার্ষিকী কক্সবাজার ৩ আসনে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিলেন আতিক উদ্দিন চৌধুরী

রোহিঙ্গা নিয়ে মহাঝুঁকিতে কক্সবাজার

রির্পোটার:
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : শুক্রবার, এপ্রিল ১৯, ২০১৯
  • 592 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

এম. বেদারুল আলম ঃ
রেহিঙ্গাদের নিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে ঝামেলা। রোহিঙ্গাদের নিয়ে একটি শেষ হলে নতুন একটি উদ্ভব হচ্ছে সমস্যা। সাম্প্রতিক সময়ে বেশি আলাচিত হচ্ছে ইয়াবা পাচার। গেল কয়েকদিনে যোগ হয়েছে রোহিঙ্গা যুবতিদের বিদেশে পাচারের ঝুঁকি। সপ্তাহের ব্যবধানে শহরের কুতুবদিয়া পাড়া, মহেশখালীর গহিন পাহাড়ে এবং টেকনাফের বাহারছড়ায়সহ ৩ স্থানে পুলিশ , বিজিবি, কোষ্টগার্ড দেড় শতাধিক রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া পাচারকালে আটক করেছে যা নতুন করে প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলছে। হঠাৎ করে পাচারের হার যেমন উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে তেমনি প্রশাসনের নিতে হচ্ছে বাড়তি সর্তকতা। এছাড়া রোহিঙ্গাদের দিয়ে সম্প্রতি স্থানীয় ইয়াবা ডিলাররা ইয়াবা পাচার বৃদ্ধি করেছে। প্রশাসন কড়াকাড়ি আরোপের পর ও কৌশলে রোহিঙ্গা নারীদের ব্যবহার করে ইয়াবা পাচার করছে । গত ৩১ মার্চ রাতে পুলিশ এবং বিজিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে ৩ পাচাকারিকে আটক করে পরে বন্দুক যুদ্ধে তারা নিহত হয়। কম খরচে ক্যাম্পের বাইরে আসার সুযোগের প্রলোভেনে এবং বাড়তি টাকা আয়ের আশায় রোহিঙ্গা নারী পুরুষ ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়ছে যা হঠাৎ করে জেলার আইনশৃংখলা অবনতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে প্রতিদিনই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের নিয়ে ঝুঁকির শংকা।
রোহিঙ্গাদের কারনে কম সময়ের ব্যবধানে নিজভূমে পরবাসি হতে চলেছে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের স্থানিয়রা। মানবিক কারনে আশ্রয় দেয়া রোহিঙ্গারা এখন জেলাবাসির জন্য মহা বিপদ ডেকে আনছে। তাদের কারনে নতুন করে পোহাতে হচ্ছে নানা সমস্যা। রোহিঙ্গাদের কারনে বাড়ছে এইডস এর বিস্তার। বাংলাদেশে কলেরা না থাকলেও রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছে সেই সমস্যাও। উখিয়া – টেকনাফের বির্স্তীণ বনভূমি উজাড় হচ্ছে, পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক ঝুঁকিও বাড়ছে। আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যা ও বৃদ্ধিও আশংকা করছেন স্থানিয়রা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারনে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। তাদের আগমনের পর থেকে জেলায়আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ক্রমাবনতি হয়েছে।
জানা যায়, রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানিয়রা অনেকেই অসুস্থ হয়ে ও হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে স্থানীয় লোকজনের চিকিৎসাসেবা পাওয়া আগের চেয়ে দুরুহ হচ্ছে। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের অভাবে রোহিঙ্গারা যেখানে সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। ফলে পানিবাহিত রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হচ্ছে। দৈনিক সাড়ে ৫ হাজার টন মানুষের বর্জ্য রাখার জায়গা নেই এমনিতে রোহিঙ্গাদের জন্য নির্মিত শেডে। বিভিন্ন এনজিও’র নির্মিত অস্থায়ি টয়লেটগুলো এখন অনেকটায় অর্কাযর বলে জানিয়েছে জেলা জনস্বাথ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিবার্হি প্রকৌশলী ঋত্বিক চৌধুরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্হাদের জন্য এখনো পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরি হয়নি । বিভিন্ন এনজিও যে টয়লেট নির্মান করেছিল তা অনেকটা অর্কাযকর। আগামি বর্ষায় চরম ভোগান্তিতে পড়বে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের কারনে কক্সবাজার এমনিতেই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের রোগ নিয়ে এসেছে । রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। কারণ দুই লাখ মানুষের জন্য যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা তৈরি, সেখানে ১১ লাখ মানুষের সেবা দিতে হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগকে।
অপরদিকে রোহিঙ্গাদের কারনে উখিয়া ও টেকনাফে এখন স্থানীয় নাগরিকরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। দিন দিন পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠছে। এভাবে চলতে থাকলে এক পর্যায়ে দেশ নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করেন স্থানিয়রা। রোহিঙ্গাদের কারনে স্থানীয় দরিদ্র শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে অন্যতম বাঁধা বর্তমানে রোহিঙ্গারা।
রোহিঙ্গাদের অবস্থান দীর্ঘস্থায়ী হলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা আছে। এখনই রোহিঙ্গা নারীদের কক্সবাজারে অবাধে চলাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। দেহ ব্যবসায়ও অনেক নারী জড়িয়ে পড়ছে। এ নিয়ে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন, উদ্বিগ্ন প্রশাসনও । এভাবে চলতে থাকলে কক্সবাজারকে অনেকেই পাশ কাটিয়ে অন্য পর্যটনকেন্দ্রে চলে যেতে পারেন। এমনটা হলে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসায় ভয়াবহ ধস নামতে পারে এমন আশংকা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন ব্যবসায়ি জানান, কক্সবাজারে সাড়ে তিনশ’ হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজ রয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারীদের অনেককেই হোটেল-মোটেলে দেহব্যবসায় পাওয়া যাচ্ছে । এদের মধ্যে এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গা নারি ও রয়েছে। তাঁদের সঙ্গে পর্যটকসহ হোটেল-মোটেল শ্রমিকদের শারীরিক মেলামেশায় বিভিন্ন ধরনের রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, এইডস আক্রান্ত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে স্থানীয় অনেকে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ায় কক্সবাজারে এইডস ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে ৷
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ আশপাশের জেলায় তাঁরা বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন । এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের কাছেও তাঁরা আশ্রয় নিচ্ছেন। পুরনো রোহিঙ্গারা স্থানীয় প্রভাবশালীদের ‘ম্যানেজ’ করে নানা রকম অবৈধ ও অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে রোহিঙ্গারা উজাড় করছে সবুজ বন এবং পাহাড়। বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, সাড়ে চার হাজার একর পাহাড় কেটে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি করা হয়েছে৷ ফলে ওই এলাকায় ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামি বর্ষায় একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ধসে পড়তে পারে পাহাড় । এতে বহু মানুষ হতাহতের আশঙ্কাও করা হচ্ছে ৷ উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী ও আশপাশের পাহাড়ের প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয়কেন্দ্র করা হয়েছে৷ এছাড়া টেকনাফ রেঞ্জে ৪৫০ একর, পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর এবং শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গা বসতি করা হয়েছে ৷ফলে মারাত্বক পরিবেশ বির্পযয়ের পাশাপাশি সবুজ বনভূমি এখন অনেকটা বিরানভূমিতে পরিনত হয়েছে।
জেলার ২৪ লাখ জনগোষ্টির কথা বিবেচনা করে আইনশৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে রোহিঙ্গাদের যেন দ্রুত সরকারের প্রস্তাবিত ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই বিষয়ে আরো সংবাদ দেখুন
© All rights reserved © 2021 cox71.com
Developed by WebArt IT