শিরোনাম :
কক্সবাজারে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্য আটক : উদ্ধার ৭ বঙ্গবন্ধু বঙ্গমাতা ফুটবল : চ্যাম্পিয়ন মহেশখালী রানারআপ চকরিয়া বর্ণাঢ্য আয়োজনে ডিসি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন সাংবাদিক মাহীকে ভুল চিকিৎসা: তত্ত্ববধায়ক মোমিনকে বদলি, তিন সদস্য কমিটি গঠন জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত¡বধায়ক ডা: মুমিনের বদলী নতুন আসছেন ডা:মং টিংঞো ৩ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ : ঘোনারপাড়ার নির্মল ধরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা কক্সবাজারে নকল কোর্ট ফি বিক্রি চক্রের ২ জন আটক রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধে স্থানীয়দের সর্বাত্মক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে সিরাজ আহমদ নাজিরের ২০ তম মৃত্যু বার্ষিকী কক্সবাজার ৩ আসনে প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা দিলেন আতিক উদ্দিন চৌধুরী

রামুর বৌদ্ধ মন্দিরে হামলার ৭ বছর পূর্ন আজঃ সম্প্রীতি ফিরলেও শেষ হয়নি বিচারপ্রক্রিয়া

রির্পোটার:
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : শনিবার, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৯
  • 312 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

নীতিশ বড়ুয়া.
সাত বছরেও শেষ হয়নি রামু-উখিয়ার বৌদ্ধ বিহার ও পল্লীতে চালানো নারকীয় হামলার বিচার। সাক্ষীর অভাবে বিচারপ্রক্রিয়া থমকে আছে। তবে রামু-উখিয়ার বৌদ্ধরা অনেকটা সম্প্রীতিতে ফিরেছে। পোড়া মন্দিরে তৈরী হয়েছে নান্দনিক স্থাপনা। দৃষ্টিনন্দন স্থাপনাশৈলীতে পূণ্যার্থীদের পাশাপাশি বাড়ছে পর্যটক আকর্ষণ। ক্ষতিগ্রস্তরা পেয়েছেন নতুন ঘর। এখনও নিরাপত্তায় সতর্ক প্রশাসন। বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মাঝে রয়েছে এখনও অসন্তোষ। তবে অপরাধীদের বেশিরভাগ আইনের আওতায় না আসায় তাদের শংকা কাটছেনা।
রামু সহিংসতার সাত বছর আজ। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুতে বুদ্ধমূর্তি, বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ বসতিতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগসহ উগ্র সাম্প্রদায়িক হামলার সেই বিভীষিকাময় দিন স্মরণে বিগত বছরের ন্যায় এ বছরও স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ। দিনব্যাপী এ স্মরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন, উপ-সংঘরাজ ও একুশে পদকে ভূষিত পন্ডিত সত্যপ্রিয় মহাথের। প্রধান ধর্মদেশকের বক্তৃতা করবেন, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব এস লোকজিৎ থের। এদিকে ২৯ সেপ্টেম্বর (রবিবার) রামু সহিংসতার সাত বছর স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদ। এ উপলক্ষে লাল চিং-মৈত্রী বিহার কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে ভোরে বুদ্ধপূজা, সকালে জাতীয় ও ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন, অষ্ট পরিষ্কার দানসহ মহাসংঘদান, দুপুরে অতিথি ভোজন ও অবস্থান কর্মসূচী, বিকালে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যায় আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং বিশ^শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ স্থানীয় বৌদ্ধ গ্রামবাসীরা অংশ নিবেন বলে জানান, ২৯ সেপ্টেম্বর স্মরণ অনুষ্ঠানে আহ্বায়ক প্রিয়রত্ন মহাথের ও সদস্য সচিব শীলমিত্র থের।
২০১২ সালের ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর রামু ও উখিয়া-টেকনাফে বৌদ্ধপল্লীতে চালানো নারকীয় হামলার ১৮ মামলার একটি বিচারও শেষ হয়নি। ন্যাক্কারজনক এ ঘটনায় দায়ীরা কেউ শাস্তি পায়নি এখনও। ঘটনার পর বিভিন্ন মামলায় ৯৯৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় আটকরা সবাই এখন জামিনে। অনেকেই বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। ঘটনার পরপরই ক্ষতিগ্রস্থ বিহার ও ঘরবাড়ি পুণনির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। দীর্ঘ সাত বছরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অনেকটা ফিরে এসেছে বলে জানান রামুর বৌদ্ধরা।
কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পি পি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, বৌদ্ধ মন্দির ও বসতিতে হামলার ঘটনায় সর্বমোট ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়। তৎমধ্যে বাদীর সম্মতিতে ১টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়। অন্য ১৮টি মামলা আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সাক্ষীর সহযোগীতায় বিচারকার্য তরান্বিত হবে। তিনি জানান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে সবরকম পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়–য়া জানান, রামু সহিংসতার সাত বছর পার করছি। ঘটনার সাত বছরে রামুর পরিস্থিতি অনেকটা ভালো। তবে এ ধরণের ঘটনা যাতে আর কোথাও না ঘটে, এ জন্য সকলকে আরো সর্তক থাকার আহ্বান জানান এবং বৌদ্ধদের পাশে থেকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশসহ সরকার ও রামুবাসির প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রামুর ১২ বৌদ্ধ বিহার, ৩০টি বসতঘর, পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে ৭টি বৌদ্ধ বিহার, ১১টি বসতঘর পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। পুড়ে যায় এসব মন্দিরে থাকা হাজার বছরের পুরাতাত্ত্বিক সব নিদর্শন। লুটপাট ও ভাংচুর করা হয় আরো ৬টি বৌদ্ধ বিহার, অর্ধশত বৌদ্ধ বসতঘরে। এ ঘটনার পর দায়ের করা হয় ১৯টি মামলা। এর মধ্যে রামুর আটটি মামলায় ৪৫৮ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। তবে রামু থানার জনৈক সুধাংশু বড়ুয়ার করা মামলাটি দু’পক্ষের আপস মীমাংসার ভিত্তিতে প্রত্যাহার করা হয়।
রামু সহিংসতার ঘটনা দীর্ঘদিনের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে যে আঘাত হেনেছিল তা অনেকটা দূর হয়েছে। তবে সম্পূর্ণরূপে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া সময় সাপেক্ষ বলে জানান, কক্সবাজার বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু। তিনি বলেন, রামু সহিংসতার সাত বছরে ফিরে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি। রামুর বৌদ্ধরা পেয়েছে দৃষ্টিনন্দন বৌদ্ধ বিহার। কিন্তু রামুর ঘটনার পর যেই মামলাগুলো হয়েছে সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।
জানা গেছে, বৌদ্ধপল্লীতে হামলার ঘটনায় দায়ের ১৯ মামলার এজাহারে নাম-ঠিকানা উল্লেখিত আসামি ছিল ৩৭৫ জন। রামু থানার আট মামলার এজাহারে মোট আসামি সাত হাজার ৮৭৫। এর মধ্যে ১১১ জনের নাম-ঠিকানা থাকলেও পুলিশ গ্রেফতার করতে পেরেছিল মাত্র ৭৪ জনকে। আর সন্দেহভাজনদের মধ্যে আটক করেছিল ১৩২ জনকে। উখিয়া থানার সাত মামলায় পাঁচ হাজার ৬২৪ আসামি থাকলেও গ্রেফতার ছিল ১১৬ জন। টেকনাফ থানার দুটি মামলায় ৬৫৩ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ছিল ৬৩ জন। কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুই মামলায় এক হাজার ৩০ আসামি থাকলেও গ্রেফতার ছিল ৯৮ জন। গত সাত বছরে ধাপে ধাপে জামিন নিয়ে বেরিয়ে গেছে সবাই।
চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার পর আদালতের নির্দেশে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি জড়িতদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে সুপারিশ করে। কিন্তু ঘটনার পরিকল্পনাকারী গডফাদারদের কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উল্টো অনেক নিরপরাধ ব্যক্তিকে আটক করে এসব মামলা দুর্বল করে ফেলা হয়েছে। আবার অনেক সাক্ষীর নাম-ঠিকানাও লেখা হয় ভুলভাবে। তাই আটক সবাই পেয়ে গেছে জামিন। দায়ীরা রয়েছে এখনও অধরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই বিষয়ে আরো সংবাদ দেখুন
© All rights reserved © 2021 cox71.com
Developed by WebArt IT