মাহাবুবুর রহমান.
মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানী নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এতে করে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হতে পারে টেকনাফের পশু ব্যবসায়ীদের। ফলে ব্যবসায়ী ও স্থানীয়দের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।এছাড়া কক্সবাজার জেলা সর্বত্র পশুর সংকট হতে পারে বলেও ধারনা করছেন সচেতন মহল।
মঙ্গলবার (৬ আগষ্ট) থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে মিয়ানমারের গবাদি পশু আমদানী নিষিদ্ধ করা হয়েছেবলে নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
তিনি বলেন, ’সরকারের নির্দশনা অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে কোনভাবেই মিয়ানমার গরু-মহিষ আমদানি করা যাবে না। পরবর্তি নিদের্শনা না আসার পর্যন্ত, এই নির্দেশনা অব্যাহত থাকবে। এই বিষয়ে লিখিতভাবে বিজিবি ও শুল্ক স্টেশনকে অবহিত করা হবে। তবে এর আগে দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গবাদিপশু আসছিল, সেগুলো শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে প্রতিটি গরু-মহিষ থেকে ৫০০ টাকা ভ্যাট আদায় করে বৈধ করা হয়েছিল।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে শাহপরীর দ্বীপ করিডোর ও হাট বাজার খাঁ খাঁ করছে। যেখানে প্রতিদিন হাজারো লোকজনের আনাগুনা দেখা যেতো, সেখানে কোন লোকজনের আনাগোনা দেখা যায়নি।
স্থানীয় পশু কারবারি রশিদ আহমদ বলেন, মিয়ানমার থেকে পশু না আসলে অনেক ক্ষতি হবে। এতদিন মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি করিডোর থেকে কিনে ব্যবসা করে আসছিলাম। যদি এখন সেখানে পশু না আসে তাহলে আমরা যারা ব্যবসায়ী রয়েছি , তাদের বেহাল অবস্থা হবে।
টেকনাফের কয়েকজন পশু ব্যবসায়ী বলেছেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানির জন্য লাখ লাখ টাকা রপ্তানিকারকদের কাছে বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে পশু আমদানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণায় তাদের বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
এছাড়াও এধরনের জটিলতায় মিয়ানমারের রপ্তানিকারকদের সাথে ব্যবসায়িক ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হবে, যা ঈদ পরবর্তী সময়ে পশু আমদানিতেও প্রভাব ফেলবে।
শাহপরীর দ্বীপ করিডোরের পশু আমদানিকারক সোহেল রানা বলেন, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পশু আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা ওপারে বিনিয়োগ করেছেন। সে হিসেবে মিয়ানমারের রপ্তানিকারকরাও বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য গরু কিনে মজুদ করে রেখেছেন। এ অবস্থায় পশু আমদানি বন্ধ হলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।
টেকনাফ উপজেলার পশু আমদানিকারক সমিটির সাধারন সম্পাদক আবু সৈয়দ বলেন, সামনে কোরবানি, হঠাৎ করে মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের শত কোটি টাকার লোকসান পোহাতে হবে। কারন মিয়ানমারে শত কোটি টাকা দাদন দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। যেসব পশু আসছিল সেগুলো ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে গেছে। এখানে কোন পশু রাখা হয়নি। এমন সময় এসে মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধ ।
তিনি আরো বলেন, কোরবানিকে সামনে রেখে সেদেশে অনেক পশু মজুদ করা হয়েছে। ইতি মধ্যে পশু বোঝাই কিছু ট্রলার আসার পথে রয়েছে। ব্যবসায়ীদের লোকসানের কথা ভেবে পশু আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
জানতে চাইলে টেকনাফে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল ফয়সল হাসান খান জানিয়েছেন, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধের নির্দেশনা এখনো পায়নি। আমি যতটুকু জানি সাগর উত্তালের কারনে পশু আসা বন্ধ রয়েছে।
টেকনাফ শুল্ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ ময়েজ উদ্দীন বলেন, মিয়ানমার থেকে পশু আমদানি বন্ধের ব্যাপারে আমি জানিনা। নির্দেশনা হাতে ফেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে করিডরে ১০ হাজার ৯৫ টি গবাদি পশু আমদানি হয়েছে। ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫ ’শ টাকা । সর্বশেষ চলতি আগষ্ট মাসের প্রথম দুই দিনে মিয়ানমার থেকে ২ হাজার ৬২৮টি পশু শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে আসেন। আমদানীকৃত পশু থেকে ১৩ লাখ ১৪ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এছাড়া সাগর উত্তালের কারনে তিন দিন ধরে মিয়ানমার থেকে কোরবানি পশু আসেনি। আশা করছি কোরবানি ঈদের আগে মিয়ানমার থেকে আরো কিছু গরু-মহিষ আসবে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে জুলাই মাসে ১০ হাজার ৯৫ টি পশু আসে। তাছাড়া সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৫ হাজার ৫২১টি। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ২৫ হাজার ৬৭টি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৯৩৬টি পশু আমদানী হয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোরটি শুল্ক স্টেশনের আওতাধীন জোন। ২০০৩ সালে ২৫ মে মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে গবাদিপশু আসারোধে বিজিবির চৌকি-সংলগ্ন এলাকায় এ করিডোর চালু করা হয়। আমদানি করা গবাদিপশু প্রথমে বিজিবির তত্ত্বাবধানে রাখা হয়। পরে সোনালী ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে রাজস্ব জমা এবং স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের অনুমতি নিয়ে গবাদিপশুগুলো করিডোর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন