মাহাবুবুর রহমান.
দেশের অন্যতম প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে সরকারি ভাবে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করা হলে পর্যটক খাতে ব্যাপক নেতীবাচক প্রভাব পড়বে এছাড়া দেশীয় এবংআর্ন্তজাতিক ভাবে একটি অঞ্চলকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। তাই বিকল্প হিসাবে মাদক নির্মূলে বিশেষ অভিযান সহ পরিকল্পিত মাদক বিরুধী কর্মসূচী চালানোর তাগিদ দিয়েছেন কক্সবাজারের সর্বস্থরের সাধারণ মানুষ।
২৬ ফেব্রæয়ারী জাতীয় সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি সভায় কক্সবাজার জেলা এবং চট্টগ্রাম মহানগরকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনার প্রস্তাবনা এসেছে। যদিও এই সিদ্ধান্ত এখনো চুড়ান্ত হয়নি। তবে ইতি মধ্যে তা দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে বিরুপ প্রভাব পড়েছে কক্সবাজারের সর্বস্থরের সাধারণ মানুষের মাঝে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এড,মোহাম্মদ তারেক বলেন,সংবাদটি শুনে আমার খুবই খারাপ লেগেছে কারন আমার জন্মভুমি এই কক্সবাজারে। আমার মতে কক্সবাজার হচ্ছে দেশীয় এবং আর্ন্তজাতিক ভাবে একটি পর্যটন নগরী তাই এই এলাকাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করা হলে আমাদের পর্যটনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। এছাড়া একটি অঞ্চলে কয়েকজন মাদকারবারীর জন্য সব মানুষকে দোষারুপ করা ঠিক না। আমি বলব দলীয় পরিচয় বাদ দিয়ে আন্তরিক ভাবে নিয়মিত মাদক বিরুধী অভিযান চালালে কক্সবাজারকে মাদকমুক্ত করা সম্ভব তাই কক্সবাজারকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা না করার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সহ সভাপতি অধ্যপক অজিত দাশ বলেন,আমার জানা মতে বাংলাদেশে মাদকপ্রবণতা শুরু হয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে তখন ভারতের সীমান্ত থেকে নিয়মিত মাদক আসতো। এখন পরিস্থিতির কারনে কক্সবাজারে মাদক পাচার বাড়লেও সেটা একেবারে অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায় নি। যদি ঠিক ভাবে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রন করা যায়। সীমান্ত পাহারা দেওয়া যায়। মাদককারবারীদের দ্রæত কঠোর শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে সব কিছু নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। আর পর্যটন নগরী হিসাবে কক্সবাজারের সাথে অবিচার করা হবে যদি এই এলাকাকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করা হয়।
কক্সবাজার বিএমএর সভাপতি ডাঃ পুচনু বলেন,আমরা কক্সবাজারের বাসিন্দা এটা আমাদের জন্য গৌরবের, কারন বিশ^ বিখ্যাত একটি পর্যটন নগরীতে আমাদের জন্ম। যেহেতু সীমান্ত কাছে অনেক ধরনের কিছু স্থানীয় সমস্যা থাকতেই পারে তাই বলে পুরু কক্সবাজারকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করা আমার মতে উচিত হবে না। এতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যও বিরুপ প্রভাব পড়বে, এছাড়া বিশে^র পর্যটকরা আর কক্সবাজারে আসবে না তারা মনে করবে এটা অপরাধ প্রবণ এলাকা। তাই আমার মতে সরকারের এই সিদ্ধান্ত পূর্ন বিবেচনা করা উচিত। আর ভিন্ন কৌশলে মাদক নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত হবে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বলেন,২০১৭ সালে মানবিক কারনে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পর থেকেই কক্সবাজারে মাদকের প্রবণতা আরো বেড়েছে। একটি বিষয় সবাই জানে রোহিঙ্গাদের কারনে কক্সবাজারে মাদক ব্যবসা বা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না তাহলে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে কেন পুরু কক্সবাজারের মানুষকে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। আমাদের দাবী সকল রোহিঙ্গাদের দ্রæত প্রত্যবাসন নিশ্চিত করে মাদক ব্যবসায়ি রোহিঙ্গাদের দ্রæত এবং কঠিন শাস্তির আওতায় আনলে অচিরেই মাদক পাচার কমে আসবে।
কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুল হক মার্শাল বলেন,আমি ব্যাক্তিগত ভাবে চাইনা কক্সবাজারকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করা হোক। কারন আমার জন্মভুমি নিয়ে কেউ বিরুপ মন্তব্য করুক সেটা আমি কখনো চাইবো না। আর মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষনা করে কি লাভ হবে ? এটা করে কি মাদক নির্মূল হবে কিনা সেটাও আমার জানার ইচ্ছা, যদি তা না হয় তাহলে কেন একটি পর্যটন এলাকাকে বদনাম করা হবে। তাই বিকল্প কোন উদ্দ্যোগ নেওয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহবান জানাচ্ছি।
মন্তব্য করুন