মাহাবুবুর রহমান.
দিন দিন ভয়ংকর হয়ে উঠছে কিশোর অপরাধীরা।শহর কিংবা গ্রাম সব খানেই এখন সব চেয়ে বেশি ভয়ংকর রুপ নিয়েছে কিশোর বয়সের অপরাধীরা। আর ঈদকে সামনে রেখে এখন আরো বেপরোয়া রুপ নিয়েছে বিভিন্ন এলাকার উঠতি বয়সের গ্রুপ ভিত্তিক তরুনরা। মূলত এলাকায় আধিপত্য বিস্তার,নিজেদের মধ্যে গ্রুপ গঠন,অনেক সময় বান্ধবি নিয়ে ঝগড়া করে বড় বড় অপরাধ সংগঠিত করছে কিশোর বয়সের ছেলেরা। মূলত পরিবারের সচেতনতার অভাবে এবং পাড়ার কিছু অসৎ ব্যাক্তি নিজের সুবিধার জন্য এসব উঠতি বয়সের ছেলেদের ব্যবহার করার কারনেই তাদের ভেতরে অপরাধ প্রবনতা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
২৫ মে রাত সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের কুরালরীফ মার্কেটের সামনে ১০/১২ টি মটর সাইকেল নিয়ে আসা অন্তত ২০ জনের বেশি কিশোর যাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৬ বছরের কাছাকাছি তারা তড়িঘড়ি করে নেমে মার্কেটের ভেতরে বাইরে কাউকে যেন খুজছে। পরে খবর নিয়ে জানা গেছে এর আগে এই গ্রুপের একজনকে আরেক গ্রুপের ছেলেরা নাজেহাল করেছে তাই পাড়ায় খবর দিয়ে গ্রুপ দিয়ে এসে প্রতিপক্ষের সাথে ঝগড়া করতে এসেছে। তবে ভাগ্য ভাল ততক্ষনে আরেক পক্ষ স্থান ত্যাগ করেছে।কালুর দোকান এলাকার ব্যবসায়ি নাছির উদ্দিন বলেণ,এখন সব চেয়ে ভয়ের বিষয় হচ্ছে উঠতি বয়সের তরুনরা। তাদের চলাফেরা এবং কথা বার্তা দেখলে মনে হয় আমরা অন্যগ্রহের বাসিন্দা। প্রায় সময় দেখা যায় কয়েকজন তরুন মটরসাইকেল নিয়ে এলাকাদে ঘুরাঘুরি করে,আবার আরেক পক্ষের সাথে উচ্চস্বরে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ছে আসলে ভয়ে কেউ তাদের সাথে কথা বলেনা। তবে আমার কাছে মনে হয় মাদকের অবৈধ টাকা এবং এলাকার বড় ভাইদের আশ্রয় পশ্রয়ের কারনে দিন দিন বেশি অপরাধী হয়ে উঠছে মনে করছি।
এদিকে চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন,এটা সত্যিয়ে এলাকায় কিছু উঠতি বয়সের তরুন বা কিশোররা বড় বড় অপরাধ করছে। বিশেষ করে গত ২৫ মে রাতে চকরিয়া একটি মার্কেটের অপ্রিতিকর ঘটনা নিয়ে একস্কুল ছাত্র আনাস ইব্রাহিমকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে হয়েছে। আমি নিশ্চিত এরকম ঘটনা অনেক জায়গা ঘটছে। তিনি জানান মূলত পারিবারিক অসেচতনতার কারনে ছাত্ররা বকে যায়। স্কুল কলেজে পড়া কালিন শিক্ষার্থীরা কোথায় যায় কার সাথে মিশে সেটা অভিবাবকরা খেয়াল রাখেননা। অনেক অভিবাবক আছে ১০ বছরে একবার ছেলের স্কুলে বা কলেজে গিয়ে খোঁজ নেয়নি ছেলে নিয়মিত স্কুলে আসে কিনা বা ছাত্র হিসাবে কেমন। তাই আমি সবার প্রতি আহবান জানাতে চায় উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের প্রতি বেশি করে নজর দেওয়া দরকার।
ঝিলংজা ইউপি চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন,আগে আমরা মুরব্বি দেখলেএকটু সমিহ করতাম এবং পাড়া মুরব্বিদের পরামর্শ মেনে চলার চেস্টা করতাম। কিন্তু এখনকার ছেলেরা মুরব্বি মানেনা বরং কোন পরামর্শ দিলে সেটা কর্নপাত করেনা। এখন মোবাইল বা ফেইসবুকের যুগ সব কিছু ডিজিটাল হয়ে গেছে। আর বেশির ভাগ সময় দেখা যায় অপরাধ প্রবণতা তাদেরই বেশি যাদের পরিবার আগে থেকেই অপরাধী ছিল। ভাল মানুষের বা ভাল বংশের ছেলেরা খুব কম অপরাধী হয়। আর তারাই বেশি মটরসাইকেল নিয়ে রাস্তা বাহাদুরি করে যাদের ঘরে খাবারের ভাত নেই। তবে এটা সত্যযে ইদানিং কিশোর বয়সের ছেলেদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা বেড়েছে। আগে ক্লাব বা গ্রুপ দেখতাম শহরে বন্দরে এখন সেই প্রথা গ্রামেও চলে এসেছে ফলে বিভিন্ন গ্রুপ একে অপর প্রুপের উপর প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সামান্য কারনে ঝগড়া হয়। এবং ঝগড়া করতে আসে ১৫/২০ জন সাথে থাকে দেশি বিদেশী অস্ত্র সব চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা কাউকে পাত্তা দিতে চায়না।
রামু চৌমহনীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ি প্রকাশ সিকদার বলেণ,রামুতেও কিশোর বয়সের অপরাধীদের দৌরাত্ব সীমাহিন বেড়েছে। কোন পানের দোকানে সামান্য পান ক্রয় নিয়ে কোন ঘটনা হলেও ১০/২০ জন আসে সেটা নিয়ে ঝগড়া করার জন্য। তবে আমার মতে বেশির ভাগ সময় বান্ধবি নিয়ে নিয়ে বিরুধ তৈরি হয়। সেটা নিয়ে একে অপরের মধ্যে মারপিট,হামলা পাল্টা হামলা এ ধরনের অনেক ঘটনা দেখেছি। আবার সেখানে অনেক রাজনৈতিক নেতার জড়িয়ে পড়ে রাজনৈতিক রং মাখিয়ে সেই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেস্টা করে। আমি একটি জিনিস বুঝিনা এত ছোট বয়সের ছেলেদের হাতে এতে নগদ টাকা আসে কিভাবে ? মূলত চাহিদার চেয়ে বেশি টাকা পয়সা এবং ক্ষমতা কিশোর বয়সে তাদের অপরাধী করে তুলছে। এ জন্য শুধু পিতা নয় সমাজ এবং রাষ্ট্রের ও অনেক ভুমিকা আছে।
কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক জেবুন্নেছা বলেন,তরুন বা কিশোর বয়সটি হচ্ছে জীবনের সোনালী সময় এই সময়টাই জীবনকে বলে দেয় সে ভবিষ্যতে কোন দিকে যাবে। কিশোর অপরাধ আসলে একদিনে হয়না। আমি মনে করি একজন স্কুল ছাত্র যখন কোন নেতার বাড়িতে যায় তখন সেই নেতার জিঙ্গেস করা উচিত তুমি স্কুলের পড়া শেষ করেছো কিনা। বাস্তবতা হচ্ছে অনেকে ব্যাক্তি স্বার্থে উঠতি বয়সের ছেলে মেয়েদের ব্যবহার করে তারা পিতা মাতার কাছ থেকে ১০০ টাকা কোন দিন পকেট খরচ না পেলেও এলাকার বড় ভাই বা নেতাদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা পকেট খরচ পায় সে জন্য ঐ কিশোরটি আর পিতামাতার বাধ্য থাকে না। এবং টাকার কারনে তার কাছে সব কিছুকে তুচ্ছ মনে হয়। তিনি বলেণ,শুধু কক্সবাজার না রাজধানী সহ সব জায়গাতে ইদানিং কিশোর বয়সের অপরাধীদের নিয়ে খুবই চিন্তিত। আমি নিজেও কোন উঠতি বয়সের ছেলেদের সাথে বিনা কারনে কথা বলতে ভয় পায় কারন জানিনা কখন কি হয়ে যায়।
এদিকে শহরের বেশ কয়েকটি মার্কেটের ব্যবসায়িরা বলেণ,প্রতিটি মার্কেটে কিছু উঠতি বয়সের ছেলেদের সব সময় দেখা যায় এরা আসলে কোন ক্রেতা না। তারা সব সময় অযথা আড্ডা দেয় আর বিনা কারনে দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষজনকে হয়রানী করে। আবার সুবিধামত পেলে সব কিছু ছিনিয়ে নেয়।
যেমন কয়েক দিন আগে সুপার মার্কেটের সামনে এক যুবক যুবতীকে রিক্সা থেকে নামিয়ে তাদের পরিচয় জানতে চাইছে,এবং বিনা কারনে তাদের হয়রানী করছিল পরে ছেলেটি ৫০০ টাকা দিয়ে কোন মতে রেহায় পেয়েছে। এ রকম ঘটনা প্রায় ঘটছে বিশেষ করে গ্রাম থেকে আসা লোকজনকে বেশি হয়রানী করছে।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন,অপরাধ এটা মানসিকতার ব্যাপার। যে বয়সে অনেকে অস্ত্র হাতে নেয় সে বয়সে বেশির ভাগই বই কম্পিউটার হাতে রাখে। তবে কিছু পরিবেশ আছে সেটার কিছুটা পরিবর্তন করা গেলে এই সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রান পাওয়া যেত। প্রথমত অভিবাবকদের সচেতনতা আমি দেখেছি অনেক অভিবাবক ছেলে বখাতে বা সন্ত্রাসী সে জন্য নিজেকে গর্ববোধ করে। অনেক সময় ভাব নিয়ে পরিচয় দেয় আমি অমুকের বাবা। ফলে সেই ছেলে আরো বেশি অপরাধী হয়ে উঠে।আবার পুলিশের কাছে যখন কোন অভিযোগ চায় তখন তারা সেটাকে হালকা ভাবে নেয় ফলে তার ভেতরে আইনের প্রতি বিরুপ ধারনা জন্ম নেয়। সব চেয়ে সমস্যা হচ্ছে বখাটে বা সন্ত্রাসীদের এলাকাতে মানুষ যখন মর্যাদা দেয়,সম্মান করে তখন তাকে আর কেউ রুখতে পারেনা। যদি সন্ত্রাসী বা খারাপ লোকদের গৃনা করে সবাই তাকে এড়িয়ে চলতো তাহলে কেউ আর সে পথে যেতনা।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আদিবুল ইসলাম বলেণ,সব ধরনের অপরাধীদের নিয়ন্ত্রনে সব সময় কাজ করছে পুলিশ। তবে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রানে পরিবারকে বেশি ভুমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মন্তব্য করুন