কক্সঃ৭১ রিপোর্ট
দেশ স্বাধীন হওয়ার চার যুগ অবসানের প্রাক্কালে অবশেষে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলো কক্সবাজারের রামু উপজেলার পাহাড় নদী আর সবুজ গাছপালায় ভরপুর গর্জনিয়া ইউনিয়ন। পাহাড়ঘেরা ২৪ দশমিক ৮৮ বর্গমাইলের এই গর্জনিয়ায় ৪৮ হাজার মানুষের বসবাস। অথচ চারপাশের ঈদগড়, বাইশারী, কচ্ছপিয়া ও কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হলেও স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর অন্ধকারে ছিলো গর্জনিয়া। জেলা শহর থেকে ইউনিয়নটির দূরত্ব ৪৩ কিলোমিটার।
১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গেল ২০১৮ সনের ২৮ ডিসেম্বর ইউনিয়নের বাচ্চু চৌধুরী চত্তর এলাকায় অবস্থিত গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ে ১১ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালনলাইনের উদ্বোধনের পর ইউনিয়নের বোমাংখিল, পশ্চিমবোমাংখিল, ক্যাজরবিল ও পূর্ববোমাংখিল গ্রামে পিডিবির বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হয় বলে জানা গেছে। ২০১৪ সন থেকে বড়বিল, থোয়াঙ্গেরকাটা, জুমছড়ি, থিমছড়ি ও জাউচপাড়া গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়। তবে পল্লী বিদ্যুতের চেয়ে পিডিবি নিয়ে গর্জনিয়ার মানুষের আগ্রহটা বেশি ছিল।
সম্প্রতি সরেজমিনে গর্জনিয়ার বোমাংখিল গ্রামের একটি বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, ল্যাপটপ নিয়ে তরুণ-তরুণীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন গৃহবধু সাজনীন জাহান (২৯)। তিনি বলেন- ‘গর্জনিয়ার মানুষ দূর থেকে আলোর ঝিলিক দেখত। এখন নিজ ঘরে পিডিবির বিদুৎ পেয়ে তাঁরা অনেক খুশি। এই জনপদের বাসিন্দাদের কাছে ল্যাপটপ ও কম্পিউটার চালানো ছিল স্বপ্নের ব্যাপার। এখন তা বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন- ‘গর্জনিয়ার নয়টি ওয়ার্ডকে দুভাগে ভাগ করে পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে। বিদ্যুৎ আসায় আগামী দুই বছর পর ইউনিয়নের চিত্র অনেকটা পাল্টে যাবে। গড়ে উঠবে ছোট বড় প্রতিষ্ঠান ও বহু কুটির শিল্প।’
গর্জনিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কায়ছার জাহান চৌধুরী বলেন-‘গর্জনিয়া ইউনিয়ন শিক্ষাক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। এলাকায় বিদুৎ না থাকায় এর কারণ। আশা করি, এখন থেকে স্থানীয় শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ায় অনেক এগিয়ে যাবে।’ পূর্ববোমাংখিল গ্রামের কৃষক আলী আহমদ (৫২) বলেন- ‘এখানে জীবিকার প্রধান উৎস কৃষি। বিদ্যুৎ আসায় কৃষকেরা পাউয়ার টিলারের মাধ্যমে চাষাবাদ করতে পারবেন।’
গর্জনিয়ায় বিদ্যুতায়নে অবদান যাদের : গর্জনিয়া ইউনিয়নকে বিদ্যুতায়ন করতে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন কক্সবাজার ৩ (সদর-রামু) আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে.কর্নেল (অব:) ফোরকান আহমেদ, গর্জনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ বারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী ও গর্জনিয়ার আমেরিকা প্রবাসি মো.সাইফুল্লাহ চৌধুরী লেবু।তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী গর্জনিয়া ইউপির চেয়ারম্যান থাকাকালিন সর্বশেষ ২০১২ সালের ১০ মে গর্জনিয়ায় বিদুৎ লাইন সম্প্রসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তাগাদাপত্র পাঠান। ওই পত্রে তৈয়ব উল্লাহ চৌধুরী উল্লেখ করেন, বিদুৎ লাইন সম্প্রসারিত হলে গর্জনিয়ার চাষের জমি ৮১৫ হেক্টর থেকে ২০০০ হেক্টরে উন্নীত হবে। শিক্ষার হার ৩০ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশ হবে। মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে। অর্থনীতির চাকা ঘুরে ৩৩ গ্রামে স্থাপিত হবে ছোট-বড় অসংখ্য কুটিরশিল্প, মৎস্য, মুরগি ও গবাদিপশুর খামার।
এ ব্যাপারে সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, ‘যে গর্জনিয়াবাসী কোনদিন বিদ্যুতের কথা চিন্তা করেনি আজ তাদের ঘরে বিদ্যুৎ এসেছে। এখন থেকে এলাকাবাসী বিদ্যুতের আলোয় কাজকর্ম ও শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করতে পারবে। পাশাপাশি টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেলের প্রচারিত বিনোদন অনুষ্ঠান উপভোগ ও খবর দেখতে পাবেন সবাই।’
গর্জনিয়ায় বিদ্যুতের অভাব নিয়ে পত্রিকায় অসংখ্যবার লিখে সংশ্লিষ্টরে নজরে এনেছিলেন এই প্রতিবেদক। তিনি বলেন- ‘কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চল গর্জনিয়া। যেখানে ‘বর্ষায় নাও আর হেমন্তে পাও’। বিদ্যুতের আলো ব্যবহার করার স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবে গর্জনিয়াবাসী এটা চিন্তাও করেনি। এখনো ইউনিয়নের মাঝিরকাটা, বেলতলী ও জাউচপাড়া এলাকার একাংশে বিদ্যুৎ যায়নি। বিদ্যুতের অভাবে এসব গ্রামের মানুষ যেন অন্ধকারে না থাকে সংশ্লিষ্টদের সেই উদ্যোগ নিতে হবে।’ এ প্রসঙ্গে রামু বিদ্যুৎ সরবরাহ কার্যালয়ের লাইন পরিদর্শক ছিদ্দিক আহমদ বলেন- ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যেই অবহেলিত মাঝিরকাটা, বেলতলী ও জাউচপাড়ার একাংশে পিডিবির সংযোগ দেওয়া হতে পারে।’
মন্তব্য করুন