শিরোনাম :
কক্সবাজার পৌর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ১৪ নেতা বহিস্কার রাজবিহারী দাশে উপর ভরসা রাখছে ৮ নং ওয়ার্ডের ভোটাররা তুরস্কে ভোট গণনা চলছে, এগিয়ে এরদোগান রামুতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন করলেন-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাদক-সন্ত্রাস ঠেকাতে যৌথ অভিযান চালানো হবে: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া ১২ কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার সেপ্টেম্বরের মধ্যে কক্সবাজারে রেল চালু হবে : রেল মন্ত্রী কক্সবাজারে ১২ হাজার বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্থ, সেন্টমার্টিনে ১২‘শ। কোন প্রাণহানি ঘটেনি ঘূর্ণিঝড় মোখা: ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত জনজীবন

প্রসব জনিত ফিস্টুলা চিকিৎসায় অনন্য হোপ ফাউন্ডেশন

রির্পোটার:
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : সোমবার, মে ১, ২০২৩
  • 88 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

কক্স৭১

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ২০ হাজার প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগী রয়েছে। প্রতি বছর নতুন করে আরও এক হাজার ফিস্টুলা রোগী যোগ হচ্ছে।আর এসব প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য হোপ ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলায় ১০০ শয্যার নতুন একটি হোপ মেটার্নিটিএন্ড ফিস্টুলা সেন্টার তৈরি করেছে। বাংলাদেশে একমাত্র আধুনিক ফিস্টুলা’র এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি রেফারেল সেন্টার হিসেবে কাজ করবে। বেসরকারি সংস্থা হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ এর উদ্যোগে এটি নির্মাণ করা হয়েছে।
এখানে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করা, প্রসবজনিত ফিস্টুলা’র সার্জারি, দেশি বিদেশি সার্জনদের ফিস্টুলা বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা করা হবে। আগামী মাসে/মে ২০২৩ শেষ সপ্তাহে উক্ত হোপ মেটারনিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টারটির উদ্বোধন করা হচ্ছে। প্রসঙ্গতঃ বলা দরকার ১৯৯৯ সাল থেকে হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ কক্সবাজার জেলায় মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা শুরু করে পাশাপাশি ২০১১ সাল থেকে প্রসবজনিত ফিস্টুলা’র চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে।শুরু থেকে আজ পর্যন্ত হোপ হসপিটাল সর্বমোট ৮১৮ জন ফিস্টুলা রোগীকে সার্জারি ও চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে সক্ষম হয়েছে। কক্সবাজারের কৃতি সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব পাবলিক হেলথে্র অধ্যাপক ডা. ইফতিখার মাহমুদ দীর্ঘদিন যাবত মাতৃস্বাস্থ্য, নবজাতক, প্রসবজনিত ফিস্টুলা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণা করেছেন।
অধ্যাপক ডা. ইফতিখার মাহমুদ তার জন্মস্থান কক্সবাজারেই, তিনি ১৯৯৯ সালে কক্সবাজারে গড়ে তুলেছেন হোপ ফাউন্ডেশন ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন অব বাংলাদেশ নামক এই প্রতিষ্ঠানটি, যা বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন এনজিও বিষয়ক ব্যুরো কর্তৃক রেজিষ্ট্রিকৃত। মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইফতিখার মাহমুদ মনে করেন, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতেই হোপ ফাউন্ডেশন কাজ করছে, যার ফলে কক্সবাজার জেলার মাতৃ ও শিশুর মৃত্যুর হার কমতে সাহায্য করছে। হোপ ফাউন্ডেশনের এটাই সিগনেচার বা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চেইন্দাস্থ ৪০ শষ্যার হোপ হসপিটাল ইতিমধ্যেই একটি মডেল হসপিটাল হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। পাশাপাশি হসপিটালটি প্রসবজনিত ফিস্টুলা চিকিৎসায়ও অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই ধরনের জটিল চিকিৎসা একযুগ ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে অত্যন্ত সুনামের সাথে করে যাচ্ছে। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রসবজনিত ফিস্টুলা নির্মূলের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।মিডওয়াইফারি সেবার মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারি হলেই প্রসবজনিত ফিস্টুলা রোধ করা সম্ভব।
সেজন্য হোপ ফাউন্ডেশন ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল এর অনুমোদনক্রমে তিন বছর মেয়াদী সম্পূর্ণ আবাসিক ‘ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি’ কোর্সটি চালু করেছে। শুরু থেকেই কক্সবাজার জেলা ও এর পার্শ্ববর্তী জেলার ছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে এই শিক্ষা কার্যক্রম কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অত্র প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা মিডওয়াইফরা বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালে কাজ করছে এবং অন্যরা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যথেষ্ঠ সুনামের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। হোপ ফাউন্ডেশনের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে নিরাপদ মাতৃত্ব। যাতে কোনো মা বিনা চিকিৎসায়, ভুল চিকিৎসায় ও কু-চিকিৎসায় প্রেগনেন্সির কারণে মারা না যায় আর এটা সম্ভব হবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মিডওয়াইফদের দ্বারাই ভেলিভারি সম্পন্ন করালে কারণ তারা এ বিষয়ে অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত। এরা স্বাভাবিক ডেলিভারিতে সহায়তা করে।
যদি কোনো কারণে স্বাভাবিক ডেলিভারি না হয় তখন জরুরিভিত্তিতে হোপ হসপিটালে সিজারের মাধ্যমে মা ও নবজাতকের জীবন বাঁচাতে হয়। হোপ হসপিটালে দিন-রাত ২৪ ঘন্টা জরুরি সেবা ব্যবস্থা চালু করা আছে। স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে এই সেবা প্রদান করা হয়। যাদের পয়সা দেয়ার অবস্থা আছে তারা নামমাত্র ফি দিচ্ছে আর যাদের পয়সা দেয়ার অবস্থা নেই তারা সম্পূর্ণ ফ্রি’তেই সেবা গ্ৰহণ করছে। প্রসবজনিত ফিস্টুলা কী? প্রসবের সময় কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেয়। প্রসব বাধাগ্রস্ত হয় ফলে প্রসবের রাস্তায় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। গর্ভবতী মায়ের যদি সময়মতো শিশুর প্রসব না হয়, জরায়ুতে শিশু মারা যায়, দীর্ঘ সময়ে এই অবস্থায় থাকার কারণে মূত্রথলি বা পায়ুপথ মারাত্মক ইনজুরড বা ক্ষত হয় আর এটাই হলো প্রসবজনিত ফিস্টুলা।
এতে প্রস্রাব ও পায়খানার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এই ক্ষত সময়মত চিকিৎসা না হলে দীর্ঘদিন থেকেই যায়। এটা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়া কোনোভাবেই চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রস্রাব আবার কখনো কখনো প্রস্রাব-পায়খানা দুটোই অনবরত ঝরতে থাকে। যত দিন যায়, পরিস্থিতি তত খারাপের দিকে যেতে থাকে। নারীর শরীর থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। ফিস্টুলা রোগীরা অনেক সমস্যায় ভুগেন। তাদের প্রজনন ক্ষমতা চলে যায়। স্বামী ত্যাগ করে। সব সময় দুর্গন্ধ থাকায় সবাই তার কাছ দূরে থাকেন। তারা মানসিক, পেশাগত সমস্যা, বৈবাহিক সম্পর্ক থাকে না। নিজেরা সবসময় লজ্জাবোধ করেন। জীবিত থেকেও তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও মানবতার জীবন যাপন করেন।
দেশে সরকারি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ফিস্টুলার প্রায় ২০ হাজার রোগী রয়েছে। এসব রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যই হোপ ফাউন্ডেশনের ২০১১ সাল থেকে এই কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এই রোগ নিয়ে হাতেগোনা যে ক’টি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা কাজ করে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করেই কাজ করছে হোপ ফাউন্ডেশন। বর্তমানে হোপ ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়াও বরিশাল বিভাগের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সঙ্গে সমন্বয় করে ফিস্টুলার সার্জারি করছে। এছাড়াও বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় ফুড ফর হাঙ্গরি এনজিও’র সঙ্গে পার্টনারশিপে দুইটি ক্লিনিক স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না।

এই বিষয়ে আরো সংবাদ দেখুন
© All rights reserved © 2021 cox71.com
Developed by WebArt IT