”
এম আবুহেনা সাগর,ঈদগাঁও
কালের আর্বতে যেমন সবক্ষেত্রে ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে, তেমনি পূর্বেকার আমলের বৌ যাত্রায় পালকির কদরও হারিয়ে গেছে সভ্য সমাজের কাছ থেকে। এক সময় বিয়ের আসরে প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে এটি খুব জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছিল। পালকি ছাড়াই কোন ধরনের বিকল্প মাধ্যম ব্যবহার করতো না তখনকার লোকজন। এই পালকি চড়ে নববধু নিজ বাড়ী থেকে চির বিদায় নিয়ে শশুর বাড়ীতে চলে যেত। পুরোনো দিনের রসিক মানুষজনদের মাঝে পালকি অনেকটা তখনকালের প্রিয় বাহন ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ের দিন বদলের যুগে সব কিছুতে পরিবর্তনের হাওয়া লেগেছে। এমনকি পূর্বের দিনের পালকিকে ডিঙ্গিয়ে এসি /ননএসি পরিবহন, কতইনা বিলাসবহুল নিউ ব্রান্ডের গাড়ী আধুনিকতার ছোঁয়ায় হাতের মুঠোতে ধরা দিচ্ছে। বিয়ে বাড়ীতে দুয়েকদিন পূর্বে থেকে পরিবহনকে খবর দিয়ে রাখে এ প্রজন্মের মানুষ জন। আসলেই তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশে পুরনোকে পিছনে ফেলে নতুনত্বকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে অনেকটা। নানা বা দাদার আমলের একাধিক লোকজন কক্সবাজার প্রতিদিনের এ প্রতিবেদককে জানান,পূর্বেকার সময়ে বিয়ের আসরে বর পক্ষকে বরন করে গোল্ডা মেরে আর হলা গেঁয়ে কনে পক্ষের লোকজন। এখনকার যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বর পক্ষের লোকজন কতইনা বিলাসিতা হয়ে বিশাল গাড়ীর বহর নিয়ে কনে পক্ষের বাড়ীতে নববধু আনতে যায়। সেখানে বৃহৎ পরিসরে বর পক্ষকে বরন করে নেওয়া হয়।
এদিকে গ্রামের মেঠোপথ ধরে বেয়ারারা গানের সুরে পালকি বেয়ে চলছিল,চার বেহারার পালকি চড়ে,যায়রে কন্যা স্বামীর ঘরে। পালকির ভিতর থেকে নববধু উঁকি মেরে দেখছে,এ যেন অপরুপ দৃশ্য। কান্না ভেজা নয়ন তবু যেনো নতুনত্তের এক স্পন্দন। বর্তমানে পূর্বের ঐতিহ্য পালকির স্থলে ডিজিটালে রুপ নিয়েছে কতই না বিলাসবহুল যানবাহন।
এক সময় এই পালকি ছাড়া বিয়ের কথা ভাবাই যেতোনা, গরীব, ধনী কিংবা মধ্যবিত্ত সকলেরই একটাই বাহন পালকি। কালের বির্বতনে চিরায়ত গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক পালকি আজ আর চোখে পড়ে না। পালকি এখন কালের সাক্ষী হয়ে আছে।
পূর্বেকার সময়ে গ্রামবাংলার হাটবাজারে পালকি সাজিয়ে রাখা হতো। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার আগেই পালকিওয়ালাদের কাছে ছুটে যেত বরের আত্মীয়-স্বজনরা। পালকি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। চার জনে মিলে পালকি বহন করত। সামনে পেছনে দু’জন করে পালকি কাঁধে নিত।
সূত্র মতে,জেলার টেকনাফ,উখিয়া,মহেশখালী, কুতুবদিয়া,পেকুয়া,চকরিয়া,রামু,ককসবাজার সদর উপজেলার প্রত্যান্ত পাড়া গায়ে বহুপূবে বিয়ে উৎসবে পালকির একটা আলাদা বাজেট থাকতো। সেই বহুল প্রত্যাশিত পালকি চড়ে নব বধুরা যেত শশুর বাড়ীতে। সবখানেই পালকির হিড়িক থাকতো। তবে পুরনো ও প্রবীণ ব্যাক্তিরা জানান,ইসলামাবাদের বাশঁঘাটায় একসময় বৌ আনার কাজে ব্যবহৃত ভাড়ায় পালকি পাওয়া যেত। এখন হয়তো খুজলেও পাওয়া যাবেনা পুরনো দিনের সে ঐতিহ্যময় পালকি।
মন্তব্য করুন