মাহাবুবুর রহমান.
প্রখর রোদ উপেক্ষা করে কৃষকের ঘাম ঝরানো ধান পাকলেই ধান কিনার আড়ৎ মিলে কমতে শুরু করে ধানের দাম। আবার ঠিক বিপরীত চিত্র যখন কোন মাঠে ধান থাকেনা তখন বাড়তি দামে ধান কিনতে চায় মিল মালিকরা। তবে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে এবার খুবই কম দামে ধানের দাম দিচ্ছে মিল মালিকরা। কিছুদিন আগেও যেখানে আরি প্রতি(১০ কেজী) ২৩০ থেকে ২৪০ টাকা বিক্রি হতো সেখানে বর্তমানে প্রতি আরি কিনতে চাইছে ১৪০ টাকায়। এতে মাঠের উৎপাদন খরচ উঠবেনা কৃষকের ফলে ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে জেলার প্রায় ৬ লাখ প্রান্তিক চাষী। অন্যদিকে ধানের ন্যয্যা দাম না পাওয়া অনেকে চরম ক্ষোব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে কৃষকের কাছ থেকে মধ্যস্বত্বভোগী বাদ দিয়ে সরসরি সরকারি ভাবে ধান কিনার দাবী জানান।এদিকে কৃষি অফিস বলছে ইতি মধ্যে কৃষকদের তালিকা করে সরকারি ভাবে ধান কিনার প্রস্তুতি চলছে আসা করি কৃষকরা উপকৃত হবে।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর বোরে মৌসুমে জেলায় প্রায় ৫৭ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছিল। সে হিসাবে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার মেট্রিক টন। আর বর্তমানে আবহাওয়া ভাল থাকায় ফলন ভাল হয়েছে। তবে বেশির ভাগ জায়গা থেকে শুনা যাচ্ছে কৃষকরা ধান বিক্রি করতে গিয়ে ধানের ন্যায্য মূল্যা পাচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করে কৃষি অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন,মূলত কৃষকরা বার বার মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়ে ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না।
এ ব্যপারে পিএমখালী ঘাটকুলিয়া পাড়া কৃষক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন,আমি চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১২ কানি জমিতে ধান চায় করেছিলাম। ধান চাষের শুরু থেকে সার বীজ,শ্রমিক,ধান ঘরে আনা যন্ত্রপাতি খরচ থেকে শুরু করে প্রতি কানির ধান(৬৫) আরি ঘরে আনতে আমার প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু আমি এখন ধান মিল মালিকদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে (৬৫) আরি তারা দাম চাইছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। তাহলে আমার পরিশ্রম কোথায় আর ধানের দাম কোথায় সে জন্য খুবই হতাশ হয়ে ধান বিক্রি করিনি। তিনি বলেন,মূলত সব মিল মালিকদের কারসাজি তারা কৃষকদের মাঠে যখন ধান থাকে তখন ধানের দাম কমিয়ে দেয় আর মাঠে যখন ধান থাকেনা তখন দাম বাড়িয়ে দেয়। কারন বেশির ভাগ কৃষকের ঘরে এতগুলো ধান দীর্ঘদিন সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নেই। তাই সবাই বাধ্য হয়ে ধান বিক্রি করবে সে জন্য দাম কম চাইছে। কিন্তু তারা ঠিকই ঢাকা চট্টগ্রামে উচ্চ দামেই ধান বিক্রি করবে। খুরুশকুল মামুন পাড়া চাষী রশিদ আহামদ বলেণ,চাষাবাদ করাআমাদের বাপ দাদার পেশা,জমি জিরাত আছে তাই চাষাবাদ ছাড়া আর কি করবো কিন্তু এই প্রখর রোদে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ধান উৎপাদন করে সেই ধানের ন্যায্য মুল্যই না পায় তাহলে আমরা চাষীরা কোথায় যাব। আমি হিসাব করে দেখেছি প্রতি আরি ধান উৎপাদনে আমাদের ২০০ টাকা বেশি খরচ হয়েছে পরিশ্রম বাদে। কিন্তু এখন সেই দামও পাচ্ছি না। পত্রিকায় দেখেছি এক কৃষক ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে এখনআমাদের ও সেই কাজ করা ছাড়া কোন পথ নেই। আমি একটা জিনিক বুঝিনা বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ,ধান আমাদের প্রধান শষ্য তাহলে সরকার নিজে কেন সরাসরি কৃষক থেকে ধান কিনেনা। এমন একটি বাজার থাকবে সেখানে সরকারি লোকজন এসে সরাসরি ন্যায্য মুল্যে ধান কিনবে। তবে এই ব্যবস্থা বর্তমানে কিছুটা আছে সেখানে সাধারণ কৃষক গিয়ে ধান বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই কারন খুরুশকুল থেকে আমি ৫ হাজার টাকা দিয়ে ধান উপজেলায় নিয়ে যায় সেখানে বলে আমার ধানে পুষ্টিগুন নাই বা চিকা বেশি এসব আজে বাজে কথা বলে নিরাশ করে দেয় এবং বাড়তি টাকা চায় তাই কেউ সরকারি ভাবে ধান বিক্রি করে না। মোট কথা অনিয়ম দূর্নীতির কারনে সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে মহেশখালীর কুতুবজোম এলাকার চাষী আজিজুল ইসলাম বলেন,শুধু আমি নয় আমাদের এলাকাতে এখন ধান নিয়ে সবাই বিড়ম্বনার মধ্যে রয়েছে। ধানতো আর খেয়ে ফেলা যায় না আবার এগুলোকে দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করাটাও অসুবিধা তাই বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় বিক্রি ও করতে পারছিনা। আমরা যারা দ্বীপ অঞ্চলের মানুষ আমাদের অসুবিধা আরো বেশি কারন এখানে নির্দিস্ট কিছু মিল আছে তাদেরকেই আমাদের বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হয়।এমন দেখা গেছে ধান দিয়েছি ২ বছর আগে এখনো টাকা দেয়নি। কিন্তু তার পরও তাকে ধান দিতে হচ্ছে কিছু করার নেই। তবে ধানের ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান সেখানকার কৃষকরা।
এ ব্যপারে জেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন,বাম্পার ফলন হওয়ার পরও কৃষক তার ন্যায্য মূল্যা না পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই দুঃখ জনক। কৃষক না বাচঁলে আমরাও বাচঁবো না। আর ধানের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার বিষয়টি শুধু কক্সবাজারের না সারা দেশের চিত্র। তবে বিষয়টি নিয়ে সরকার কাজ করছে ইতি মধ্য উপজেলা ভিত্তিক কৃষকদের তালিকা করে সরকারি ভাবে ধান কিনার জন্য তালিকা করা হচ্ছে,অবশ্য এর মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় কাজ শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত কৃষকরা তাদের উৎপাতিক ফসলের ন্যায্য মূল্যা পাবে।
মন্তব্য করুন