মাহাবুবুর রহমান.
বহুল প্রতিক্ষিত কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্টিত হবে আগামী ১২ জুন। ইতি মধ্যে কক্সবাজার পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডে নির্বাচন উপলক্ষে প্রচার প্রচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। চলতি মাসের ১৬ জুন মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়া শেষ দিন সে হিসাবে ইতি মধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর নির্বাচনে আগ্রহীরা মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করছেন। এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে কাউন্সিল নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া অনেকে এলাকার চিহ্নিত অপরাধী,আবার অনেকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও রয়েছে। আছে মাদক ব্যবসা করে কালো টাকা আয়ের অভিযোগ। এসব কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে অনেকে খোলামেলা বলতে না পারলেও ভোটারদের মধ্যে কানাখোশা চলছে তাদের নির্বাচন করা নিয়ে।
কক্সবাজার পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আবছার,আবুল কালাম,শামসুল আলম সহ অনেকে সাথে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে গেলে তারা জানান,আগে নির্বাচন আসলে এলাকার ভাল মানুষ,শিক্ষিত মানুষ বংশমর্যাদা সম্পন্ন পরিবারের মানুষজন নির্বাচন করতো,আমরা খেয়ে না খেয়ে তাদের পেছনে নির্বাচন করতাম। এখন ইয়াবা ব্যবসায়ি,কালো টাকার মালিক,বিভিন্ন অপরাধের মামলার আসামী নিজেরাই ঘোষনা দেয় আমরা নির্বাচন করবো। দু:খের বিষয় কিছু মানুষ টাকার জন্য তাদের পেছনে জিন্দাবাদ দেয়। ফলে এখন আর নির্বাচনে ভাল মানুষ আসেনা। পৌর এলাকার ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবুল ফজল,বদিউল আলম,মাহমুদুল হক সহ অনেকে বলেন,আমাদের ওয়ার্ডের শুনেছি এ পর্যন্ত ৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছে কিন্তু সত্যি কথা তাদের মধ্যে আসলেই কি জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্যতা আছে ? আমাদের জানা মতে এখানে মাদক ব্যবসায়ি সহ অনেক বড় বড় অপরাধী আছে,অনেকে ভুমি দখল,বিচার বানিজ্য,আবার চারিত্রিক ভাবেও গ্রহনযোগ্য নয়। ফলে আসলে ভোটটা কাকে দেব সেটা নিয়ে চিন্তায় আছি। ভোট আসলে সবাই মাথায় টুপি পড়ে এবেবারে হুজুর হয়ে যায় কিন্তু ভোট চলে গেলে মসজিদের কাছ দিয়েও হাটে না। পৌর এলাকার ২ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা ফজল করিম,কুতুব উদ্দিন,ছালাউদ্দিন সহ অনেকে বলেন,বৃহত্তর নুনিয়ারছড়ার মানুষ ব্যবসায়ি হিসাবে একটা আলাদা পরিচিতি ছিল কিন্তু গত কয়েক বছরে সবাই এখন মাদকের আখড়া হিসাবে নুনিয়ারছড়াকে মনে করে, এর চেয়ে দূর্ভাগ্য আর কি হতে পারে। এখন যারা কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করছে তাদের মধ্যে বেশির ভাগই স্কুলের গন্ডি পার হতে পারেনি,সে হিসাবে একজন অশিক্ষিত লোক থেকে আমাদের শিক্ষাগত সনদ এবং জাতীয়তা সনদ নিয়ে হবে। আমরা মনে করি এটা পরিবর্তন করতে হবে মূলত যোগ্যতা বিবেচনা করে যদি মানুষ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতো তাহলে অযোগ্য অশিক্ষিত,মাদক ব্যবসায়িরা নির্বাচন করার সাহস পেত না। এছাড়া ৬ নং ওয়ার্ড, ৯ নং ওয়ার্ড,১১ নং ওয়ার্ডের অনেক ভোটারের সাথে কথা বলেও কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে হতাশার কথা শুনা গেছে। তাদের দাবী অনেক চিহ্নিত অপরাধীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এটা কোন ভাবেই কাম্য নয়।
এ ব্যপারে কক্সবাজার সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করার মূলে রয়েছে কিছু অতিলোভী জনগন। তারা ভোট আসলে কিছু নগদ ইনকাম করার জন্য ভুমিদস্যু,মাদক কারবারী সহ চিহ্নিত অপরাধীদের পেছনে গিয়ে তাদের উৎসাহিত করে ফলে সমাজের ভাল মানুষরা অনেকটা কুন্ঠাসা হয়ে পড়ে। তারা আর সামনে আসতে চায়না। আগে যারা টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করে তাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে সমাজের শত্রæ হিসাবে চিহ্নিত করা দরকার। আর যারা নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনসেবা করতে চাই তাদের কোন ভাবেই ভোট না দেওয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
কক্সবাজার আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এড,জিয়া উদ্দিন আহামদ বলেন,সত্যি কথা হচ্ছে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দেখে আমরা হতাশা ব্যাক্ত করা ছাড়া কিছুই করার নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি বর্তমানে পৌরসভার ১২ টি ওয়ার্ডে যারা কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন তারা অনেকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত এবং কালো টাকার মালিক। আমরা শুনছি অনেকে কোটি টাকার বাজেট নিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচন করছে তাহলে এই টাকার উৎস কি ? আর তারা নির্বাচিত হলে কি করবেন এতই বুঝা যায়। আমার মতে জনগনকে জেগে উঠতে হবে,চিন্তা করতে হবে। ভাল মন্দ বুঝতে হবে। পচাঁ বাশি তরকারি দিয়ে ভাত খেয়ে পরে পেট ব্যাথা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার চেয়ে কম টাকার হলেও ভাল খাবার খেতে হবে। তাহলে নিজে এবং সমাজ সুস্থ থাকবে।
মন্তব্য করুন