সৈয়দুল কাদের,
দুর্যোগপুর্ণ আবহাওয়ায়ও কক্সবাজারে লাখো পর্যটক এসেছেন। গত বৃহস্পতিবার বিকেলের দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত লাখো পর্যটকে ভরপুর হলেও হঠাৎ ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সবকিছু থমকে দাড়িয়েছে। আগত পর্যটকের অধিকাংশই হোটেল-মোটেলে অনেকটা বন্দী অবস্থায় সময় কাঠাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে এখন অনেকটা ফাঁকা হয়ে আছে সৈকত এলাকা। আজকে আরো পর্যটক উপস্থিত হবে কক্সবাজারে এমনটি জানালের পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা।
আগে থেকে হোটেল-মোটেল ঠিক করে বেড়াতে আসলেও বৃষ্টির কারণে হোটেলই অনেকটা আটকা পড়ে আছেন লাখো পর্যটক।
হোটেল মালিক ও টুরিস্ট পুলিশের ভাষ্যমতে, গত তিন দিনে অন্তত ৪ লাখেরও বেশী পর্যটক সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। যার অধিকাংশই এখন হতাশ হয়ে হোটেল-মোটেলে অবস্থান করছেন।
৭ জুন শুক্রবার সকালে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নেমে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক পর্যটক গোসলে ব্যস্ত কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টিতে সবকিছু থমকে দাড়ায়। অন্যদিকে হোটেল না পেয়ে শহরের কলাতলী সড়কে বিভিন্ন হোটেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য পর্যটক। তাঁদের সঙ্গে শিশুরাও। জীবনের প্রথম বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে এসে দুর্ভোগে পড়তে হবে, তা তাঁদের জানা ছিল না।
ঢাকা থেকে আগত কামরুজ্জামান জানান চার ছেলেমেয়ে নিয়ে সকালে কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড়ে নামেন এরপর আশপাশের ১০-১২টি হোটেলে খোঁজ নিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোথাও কক্ষ ভাড়া পাওয়া যায়নি। দুপুর ১২টার দিকে একটি হোটেলে কক্ষ পেলেও আর বৃষ্টির কারণে আর বের হতে পারেননি। এমন আবহাওয়াও ‘এত লোক এখানে আসবে, কল্পনাও করিনি। শহরের সুগন্ধা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মোড়েও হোটেলের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে শতাধিক পর্যটককে। এর মধ্যে নারী ও শিশুদের দুর্ভোগ চরমে।
হোটেল সুগন্ধার ম্যানেজার নুরুল আবছার বলেন, গত এক যুগে এত বিপুল পর্যটকের সমাগম কক্সবাজারে হয়নি। গত তিন দিনে সৈকত ভ্রমণে এসেছেন ৪ লাখের বেশী মানুষ। চার শতাধিক হোটেল-মোটেল-কটেজের কক্ষ অগ্রিম বুকিং থাকায় অনেকে বিপাকে পড়েছেন। বিভিন্ন এনজিও সংস্থা অন্তত অর্ধশতাধীক হোটেল ও গেস্ট হাউজ অফিস হিসাবে ব্যবহার করার আবাসন সংকট আরো তীব্র হয়েছে। ভবিষ্যতে এ সংকট আরো বাড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম হোটেলকক্ষ বুকিং দিয়েই ভ্রমণে আসা উচিত। তিনি আরো বলেন গত বৃহস্পতিবার লাখো পর্যটকে ভরপুর হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সবকিছু থমকে দাড়িয়েছে। যার ফলে আগত পর্যটকদের অধিকাংশই এখন আদমনা হয়ে হোটেলেই অবস্থান করছেন।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ দৈনিক বলেন, গত তিন দিনে চার লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে এসেছেন। এর বিপরীতে যে ব্যবসা হওয়ার কথা তা হচ্ছে না। পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সকল কর্মসূচী এখন বাতিল করেছে। হোটেল মোটেলের বাইরে রেস্টুরেন্টেও তেমন ব্যবসা হচ্ছে না। অনেক পর্যটক তাদের কার্যক্রম সীমিত করে এনেছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের সুপার মো. জিল্লুরর রহমান বলেন, হঠাৎ করে কয়েক লাখ মানুষের উপস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এত পর্যটক আসার পরও কোথাও তেমন জটলা নেই। সৈকত ভ্রমণের পাশাপাশি পর্যটকেরা দলে দলে পাহাড়ি ঝরনার হিমছড়ি, দরিয়ানগর, পাথুরে সৈকত ইনানী, টেকনাফের মাথিন কূপ, নাফ নদী, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়লেও বৃষ্টির কারণে তা এখন নেই। এরপর পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাঁদের সমস্যা সম্পর্কে সজাগ আছে প্রশাসন। পর্যটকদের কাছ থেকে হোটেলের অতিরিক্ত ভাড়া আদায় হচ্ছে কি না, তা তদারকির জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে আছে। পর্যটক হয়রানির যেকোনো অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন