এম আবুহেনা সাগর,মাটিরাঙ্গা থেকে ফিরে
জন্মের পর থেকে প্রথম পা ফেলা জায়গা হচ্ছে মাটিরাঙ্গা। সেটি খাগড়াছড়ির একটি উপজেলা। নতুন অচিন দেশ,নতুন মানুষ,নতুন পথঘাট সবই যেন অপরিচিত। বেড়ানোর আশায় ছুটে চলা নবজায়গায়। অচিন পাহাড়ী আঁকাবাঁকা মেঠো পথে আসতে আগ্রহটা ছিল বেশি। সেই আশায় বুক বেঁধে কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও থেকে ঈদুল আযহার দিন (১২ আগষ্ট) দুপুরের দিকে রওনা দিলাম। ঠিক সন্ধ্যার সময় পৌছলাম চট্রগ্রাম তুলাতলির জামাই বাজারের ছয় তলার বাসায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে পুরো শরীর জুড়ে ব্যাথা অনুভব হয়। তবু সেটি মুছে গেল নতুনত্বের পানে ছুটে চলবো বলে।
পরের দিন (১৩ আগষ্ট) বিকেলে সেই উঁচু নিচু আর পাহাড়ী এলাকা মাটিরাঙ্গার পথে যাত্রা। বায়োজিদস্থ কাউন্টারে এসে দেখি কাহিল অবস্থা। গাড়ীর সিট নেই। তবুও অপেক্ষা,সন্ধ্যা ৭টায় শান্তি পরিবহন নামে একটি গাড়ীতে উঠা। ছাড়ল গাড়ী। পরিচিতি নাম হাটহাজারী পার হয়ে চোখে পড়লো গহীন পাহাড়। সড়কের দুপাশ জুড়েই শুধু গাছ আর গাছ। নেই কোন ঘর বা দোকানপাঠ। তবে উচু নিচু আর আঁকা বাঁকা পাহাড়। ভয় আর আতংক কাটছেনা কোনভাবেই। তবুও”রাখে আল্লাহ মারে কে”এই আশায় দ্রুতগতিতে ছুঁটে চলছে শান্তি পরিবহন। দীর্ঘ আড়াইঘন্টা পথ অতিক্রম করে মাটিরাঙ্গা আদর্শ উপজেলা পরিষদ চত্তর পৌছলাম। সেখান থেকে মাহিন্দ্রা যোগে পাহাড় কেটে তৈরী করা নতুন কালো পিছঢালা রাস্তা দিয়ে অবশেষে সেই কাঙ্খিত পাহাড়ী জনপদ মাটিরাঙ্গার বেল ছড়ি ইউনিয়নের ওয়াজেদ আলী মেম্বার পাড়ায় আত্বীয়ের বাড়ীতে পৌছলাম রাত সাড়ে দশটায়। সাথে পরিবার। মা-বাবা,ছোটভাই আবু ছালেহ ওপেল,আবুু হানিফ মড়েল,ভাইবৌ পপি,আমার মেয়ে সানজিদা হেনা আইরিনসহ আমি। বাড়ীর উঠাতে রাত অবধি আড্ডা যেন থেমে নেই। সেখানে নানা বিষয়ে খোঁঁজখবর নেয়া হলো বাবুর কাছ থেকে। তারপর আপ্যায়ন। রাত দেড় টার দিকে ঘুুম। ১৪ই আগষ্ট সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি রিমঝিম বৃষ্টি। গাছগাছালি আর পাহাড়ী এলাকা ভালই লেগেছে। এলাকা জুড়ে বিদ্যুৎ নেই। নেটওর্য়াকের দেখা নেই। সৌর বিদ্যুৎতের উপর নির্ভরশীল এলাকা। অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখাই ছিল ঈদ ট্যুরের প্রধান লক্ষ্য। বাড়ীর সন্নিকটে বিজিবি ক্যাম্পসহ আশ পাশের পাহাড়ী এলাকা গুলোর দৃশ্য যেন মনো মুগ্ধকর। গ্রামীন মেঠোপথের চিত্র মন জুড়িয়ে দেয়। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে বের হলাম ঐতিহ্যময় খাগড়াছড়ির হরেক রকমের ষ্পট দেখতে। কিন্তু যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হল ভাড়া চালিত মোটর সাইকেল। উচু নিচু পাহাড় অতিক্রম করা অন্য গাড়ীর পক্ষে সম্ভব না। খাগড়াছড়ি হর্টিকালচার পার্কে প্রবেশ করে চতুরদিকে ঘুরে ঘুরে মনের মত করে উপভোগ করলাম। সেখানেই ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত ব্রীজ দেখেই ভাল লাগলো। তবে মনোমুগ্ধকর দৃশ্য লাভ পয়েন্ট। পাশ্বর্বতী বিনোদন স্পর্ট আলুটিয়া সুড়ঙ্গ গুহা দেখে গাঁ শিউরে উঠলো। ভেতরে প্রবেশ করে পাঁচ মিনিট অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। তবে ভেতরে থাকা অবস্থায় সারা শরীর কাপঁছিল ভয় আর আতংকে। অন্যদিকে খাগড়া ছড়ির পুরো শহরটি ক্যামরা বন্দি করলাম। এই প্রথম দর্শনীয় স্থান সানন্দে উপভোগ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। এখানে হলুদ আর কলার জন্য প্রসিদ্ব। সার্বিক সহযোগীতায় ছিলেন নিকটত্বায়ী বাবু। সাথে আমি গনমাধ্যম কর্মী আবুহেনা সাগরসহ ছোট ভাই ওপেল। সব মিলিয়ে ঈদ আনন্দে এবার পরিপূর্নতা পেয়েছি।
মন্তব্য করুন