মাহাবুবুর রহমান.
অপ্রয়োজনীয় শব্ধ দূষণে নানান রোগ ব্যাধি বাড়ছে কক্সবাজারের মানুষের। বিশেষ করে শিশু মহিলা এবং বয়স্কদের জন্য শব্ধ দূষণ মারাত্মক ঝুকি বলছে বিশেষজ্ঞরা। এদিকে শব্ধ দূষণ নিয়ন্ত্রনে কার্যত কোন পদক্ষেপ না থাকায় যে যার মত করে বাড়াচ্ছে শব্ধ দূষণ। তবে সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন সচেতনতা বিশেষ করে গাড়ী চালকদের শব্ধ দূষণ রোধে ব্যাপক সচেতনতা সহ সামাজিক ভাবে এই বিষয়ে বিশেষ কর্মসূচী নেওয়া দরকার বলে মনে করেন সচেতন মহল।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ও বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা: মো : আলম বলেন,কক্সবাজারে এখন মানুষের সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে সেই সাথে গাড়ীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। ফলে রাস্তাঘাটে অতিরিক্ত শব্ধ দূষণ মারাত্মক হারে বেড়েছে। বাস ট্রাক সহ অনেক ছোট গাড়ীতেও হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করা হচ্ছে যা আইন সম্মত নয়। কিন্তু যে যার মত করে হর্ণ বাজিয়েই চলেছে এতে সাধারণ মানুষের উপর অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে যেমন গর্ভবতিদের জন্য শব্ধ দূষণ মারাত্মক অসুবিধা হয়। এর প্রভাব অনাগত সন্তানের উপরেও পড়ে। ফলে সন্তান পৃথীবিতে আসার আগেই উক্ত নবজাতকের হার্ট,কান শ্রবণশক্তি এমনকি ব্রেইনের উপরেও প্রভাব পড়ে। এছাড়া শিশু এবং বয়স্কদের জন্য শব্ধ দূষণ মারাত্মক ভাবে অসুবিধা করে।
শহরের তারাবনিয়ারছড়া এলাকার ব্যবসায়ি খোরশেদ আলম বলেন,আমি মটরসাইকেল সহ বিভিন্ন পার্স আমদানী করি তাই বছরে অন্তত কয়েকটি দেশে ভ্রমন করি। গত কয়েক মাস আগেও ভারত এবং সিঙ্গাপুরে ভ্রমন করেছি কিন্তু কোথাও আমাদের দেশের মত এত শব্ধ দূষণ আমি শুনিনি। আমাদের ট্রাক,বাস,লরি গুলোতে যে পরিমান হাইড্রোলিক হর্ণ ব্যবহার করা হয় তা পৃথীবির অন্যকোথাও নেই। সেখানে সব গাড়ীতে হর্ণ ব্যবহার হয় নিয়ন্ত্রিত শব্ধে যাতে আশপাশের মানুষের কোন অসুবিধা না হয়। তবে এটাও ঠিক আমাদের দেশে অনেক বাজার হয় রাস্তার উপরে কিন্তু উন্নত দেশে রাস্তায় কোন বাজার নেই। এছাড়া বেশির ভাগ সময় সামাজিক অনুষ্টান গুলোতে যে পরিমান শব্ধযত্র ব্যবহার হয় এটাও আমার মতে অন্যায় এতে অনেক সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়।
শহরের নুনিয়ারছড়া এলাকার ব্যবসায়ি নাজিম উদ্দিন বলেন,কিছুদিন আগে আমার স্ত্রীকে নিয়ে ইউনিয়ন হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালে ছিলাম কয়েক দিন এখানে যে পরিমান মাইকের আওয়াজ মনে হয় রোগি সুস্থ হওয়ার চেয়ে অসুস্থ বেশি হবে। ওয়াজ মাহফিল,হারানো বিজ্ঞপ্তি,মোবাইলের সীম বিক্রি,বিভিন্ন স্কুলের প্রতিযোগিতা,বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা মাহফিলের মাইকিং সব যেন হাসপাতাল সড়কেই করতে হয়। অথচ এখানে বেশ কয়েকটি হাসপাতাল আছে সরকারি হাসপাতাল সহ অন্তত কয়েক শত রোগি ভর্তি থাকে। যার মধ্যে অনেকের অবস্থা সূচনীয় পর্যায়ে থাকে কিন্তু কারো কোন পরোয়া নেই সবাই সমানে মাইকের আওয়াজ করেই যাচ্ছে। বিশেষ করে ওয়াজ মাহফিলের মাইকগুলো সারারাত থাকে। আমিও একজন মুসলিম আমি মনে করি ওয়াজ মাহফিলের মাইক যেখানে মাহফিল চলবে তার পাশেই থাকা উচিত একেবারে রাস্তার উপরে আনার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা চিন্তা করা দরকার।
এ ব্যপারে কক্সবাজার বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো: আনোয়ার হোসেন বলেন,হাইড্রোলিক হর্ণ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। আমার সামনে যখনি কোন গাড়ীতে হাইড্রোলিক হর্ণ পড়ে আমি খুলে ফেলি,মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালাই। তবে আমি মনে করি হাইড্রোলিক হর্ণ আমাদের সমাজের জন্য ক্যান্সারের মত ক্ষতি করে।তবে এ বিষয়ে জনসচেতনতা বেশি প্রয়োজন সাধারণ মানুষ সচেতন মহলে কোন গাড়ীতে হাইড্রোলিক হর্ণ থাকতে পারেনা।
এ ব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড.আবদুল হামিদ জানান,পরিবেশ অধিদপ্তরের আওতায় সারা দেশে শব্ধ দূষণ নিয়ন্ত্রনে বিশেষ কর্মসূচী চলমান আছে। হয়তো কিছুটা ধীরগতিতে চললেও এই কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে। বিশেষ করে কক্সবাজার একটি পর্যটন নগরী এখানে সব কিছু হতে হবে পর্যটক বান্ধব তাই শব্ধ দূষণ নিয়ন্ত্রনে কক্সবাজারে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।
মন্তব্য করুন