শিরোনাম :
কক্সবাজার সদর উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সুনীল অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করতে অপ্রচলিত মৎস্য পণ্যের গুরুত্ব অপরিসীম আন্ত: স্কুল ফুটবল প্রতিযোগিতায় বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমি চ্যাম্পিয়ন বিমানবন্দরে ইয়াবাসহ রোহিঙ্গা পরিবার আটক হোয়ানকের একাধিক মামলার আসামী আবুল কাশেম গ্রেফতার। জনমনে সস্তি কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই ফিরে গেল মিয়ানমার প্রতিনিধি দল জীপ মাইক্রো কার মালিক সমিতির বাসটার্মিনাল শাখার কমিটি গঠিত ইয়াবা মামলায় টেকনাফের ২ জনের যাবজ্জীবন শিক্ষার্থীদের মাঝে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে ধারনা দিল কক্সবাজার বিআরটিএ ‘‘বিশ্ব শান্তির জন্য হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর শিক্ষা ও আদর্শ সর্বাবস্থায় অনুকরণীয়’’

৫ বছর ধরে সরকারি বালু বিক্রি করেছে রামুর জিয়াবুল সওদাগর

রির্পোটার:
  • সংবাদ প্রকাশের সময় : শুক্রবার, মে ১০, ২০১৯
  • 473 বার সংবাদটি পড়া হয়েছে

বাঁকখালী নদীর রামু উপজেলার দক্ষিণ চাকমারকুল নতুন চরপাড়ার (ফুঁয়ারচর) সরকারি ১০ একর জমিতে দীর্ঘ ৫ বছর ধরে রাজত্ব চালাচ্ছে জিয়াবুল সওদাগর নামের এক বালিদস্যু। ফি বছর নদীর ওই চর থেকে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ফুট বালি বিক্রি চলছে। গত ৫ বছরে ৩ কোটি ফুট বালি বিক্রি করে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জিয়াবুল সওদাগরের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটটি। প্রশাসন ম্যানেজ করতে কালো টাকা এবং স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ সাধারণ মানুষকে বাধা দিতে জিয়াবুল সওদাগরের পুত্র জোবায়েরের নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে সন্ত্রাসী বাহিনী। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে বালি উত্তোলনের ঘটনায় চরটি ‘জিয়াবুল সওদাগরের চর’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ ৫ বছর ধরে প্রকাশ্যে দিনে-রাতে এভাবে কোটি কোটি টাকার বালি তুলে বিক্রি করলেও সরকারি দপ্তরগুলো একপ্রকার নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। অন্যদিকে অপরিকল্পিতভাবে নদীর পাড়ের মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে বসতবাড়ি, মসজিদ, বিদ্যুতের খুঁটি, সাঁকোসহ বিস্তীর্ণ ফসলী জমি ধ্বসে পড়ছে। ঝুঁকিতে পড়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। একই সাথে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের।
এদিকে জেলা প্রশাসনে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার দিকে সেখানে অভিযান চালিয়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) চাই থোয়াইলা চৌধুরী।
এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানিয়েছেন, রামু উপজেলার দক্ষিণ চাকমারকুল নতুন চরপাড়ায় (ফুঁয়ারচর) বাঁকখালী নদী তীরের প্রায় ১০ একরের সরকারি জমির বালি ও মাটি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উত্তোলন করে বিক্রি করে আসছেন চাকমারকুলের মিয়াজীপাড়ার মৃত মোজাহেরুল হকের পুত্র জিয়াবুল সওদাগর। দিনে-রাতে প্রকাশ্যে এসব মাটি ও বালি স্কেভেটর দিয়ে কেটে নেয়া হচ্ছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০/২৫টি পিকআপ ও ট্রাকে করে এসব মাটি ও বালি বিক্রি করা হয়। মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে এলাকার মসজিদ, বসতঘর, রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুতের খুঁটি, বেড়িবাঁধ, সাঁকোসহ বিস্তীর্ণ কৃষি জমি ধ্বসে পড়ছে। এতে এলাকার লোকজন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এলাকাবাসী প্রশাসনকে অভিযোগ করলেও কাজের কাজ কিছুই হয়না। উল্টো এলাকাবাসীকে মারধর ও বিভিন্নভাবে হয়রানী করা হয়। প্রতিবাদি এলাকাবাসীকে ঠেকাতে জিয়াবুল সওদাগরের পুত্র জোবায়েরের নেতৃত্বে সন্ত্রাসী বাহিনীও গঠন করা হয়েছে। ওই সন্ত্রাসী বাহিনীর পাহারায় এলাকাবাসীর বাধা উপেক্ষা করে সেখানে দিনে-রাতে বালি ও মাটি উত্তোলন করা হচ্ছে। এলাকাবাসী আরও জানান, এক সময় জিয়াবুল সওদাগরের সম্পদ বলতে তেমন কিছুই ছিল না। কিন্তু গত ৫ বছরে সরকারি চরের মাটি ও বালি বিক্রি করে এখন কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। এমনকি ওই চর এলাকাতেই বিপুল পরিমান জমি কিনেছেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র দাবী করেছে, সরকারি জমির প্রায় ১০ একরের মতো চরে বালি ও মাটি উত্তোলন করে জিয়াবুল সওদাগরের সিন্ডিকেট। চরের ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত গভীর করে বালি ও মাটি কেটে নেয়া হয় স্কেভেটরের সাহায্যে। প্রতি বছর সেখান থেকে ৫০ থেকে ৬০ লাখ ফুট বালি উত্তোলন করা হয়। তৈরী করা হয় পুকুরের মতো গর্ত। পরে বর্ষা মওসুমে তা আবারও ভরাট হয়ে যায়। এভাবে গত ৫ বছরে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ওই চর থেকে প্রায় ৩ কোটি ফুট বালি বিক্রি করে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেটটি। সূত্রটির দাবী, ওই টাকার একটি বড় অংশ ভাগবাটোয়ারা হয় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে। যার কারণে কোটি কোটি টাকার বিপরীতে সরকারি কোষাগারে জমা পড়েনি একটাকাও।
রামু ভূমি অফিসের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাঁকখালী নদী তীরের ওই এলাকায় প্রায় ২৯টি সরকারি খাস দাগের আওতায় প্রায় ১৫ একর সরকারি জমি রয়েছে। আর সেখান থেকে প্রায় ১০ একরের মতো চর এলাকার বালি ও মাটি কাটা হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে ওই চরটি কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি।
গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, রামু-কক্সবাজার মহাসড়কের চাকমারকুল এলাকার এন.আলম ফিলিং ষ্টেশনের বিপরীত পাশে বাঁকখালী নদীর পাশ দিয়ে ফসলী জমির বুক চিরে প্রায় এক কিলোমিটারের রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। ওই রাস্তার প্রবেশ মুখেই পাহারার জন্য রয়েছে একটি টং ঘর। সেখানে সার্বক্ষনিক পাহারায় থাকে লোকজন। দেখা গেলো- রাস্তাটির আশ-পাশের জমি ও চরের বালি এবং মাটি দু’টি স্কেভেটরের সাহায্যে কেটে নেয়া হচ্ছে। ১৫/২০টি পিকআপে (ডাম্পার) করে তা বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে। পাহারায় টং ঘরে থাকা জিয়াবুল সওদাগরের ম্যানেজার পরিচয়ে শফি নামের এক ব্যক্তি জানান, প্রতি ফুট বালি আড়াই থেকে তিন টাকায় স্পট থেকে বিক্রি করেন তারা।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়াবুল সওদাগর বলেন, ‘আমার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে বালি বিক্রি করছি। তাতে আপনাদের কি।’ সরকারি জমির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব প্রশাসনের সাথে কথা বলেই করছি। তাদের কোন সমস্যা নেই আপনার সমস্যা কি।’
এ প্রসঙ্গে রামু উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) চাই থোয়াইলা চৌধুরী বলেন, ‘ওই এলাকার সরকারি চর কাউকে ইজারা দেয়া হয়নি। তবে বেশ কিছুদিন আগে জিয়াবুল সওদাগর নামের এক ব্যক্তি তার ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে জমে থাকা কিছু বালি সরিয়ে নেয়ার আবেদন করলে আমরা অনুমতি দিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন অভিযোগ পেয়ে দেখছি তিনি বালি, মাটিসহ সবকিছুই কেটে নিচ্ছেন। তাই তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সাথে বালি ও মাটি উত্তোলন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।’ এছাড়া সরকারি চরের বিষয়টি তিনি খতিয়ে দেখবেন বলেও জানান।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনে সংশ্লিষ্টদের বলে দেয়া হবে। সরকারি জমির সম্পদ বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই।’

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

এই বিষয়ে আরো সংবাদ দেখুন
© All rights reserved © 2021 cox71.com
Developed by WebArt IT