আজিম নিহাদ
কক্সবাজারে হঠাৎ উদয় হলো শফিকুল ইসলাম প্রকাশ শফিক নামে এক ভূমিদস্যু। টাকার বাহাদুরিতে পুলিশও নগ্নভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে তার পক্ষে। দাবীকৃত জমি ছেড়ে না দিলে অসহায় মানুষদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে। বিনা মামলায় বসতবাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। চলছে দুর্বলের উপর শক্তিমানের খেলা। শফিকের করাল গ্রাসী থাবায় সবকিছু দখল হয়ে যাচ্ছে। বাদ যাচ্ছেনা প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় নারী পুরুষের বসতভিটাও। অনেক রাজনৈতিক নেতারাও শফিকের ক্ষমতার কাছে অসহায়। তার কথায় পুলিশ ‘ওঠে আর বসে’-এমন প্রচারও আছে। প্রশ্ন হলো- শফিকের ক্ষমতার উৎস্য কোথায়? অসংখ্য নিরীহ মানুষের ভিটেমাটি কেড়ে নিলেও তার বিরুদ্ধে কেন প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।
কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা খরুলিয়াসহ পুরো কক্সবাজারে একের পর এক জমি দখল করে নিচ্ছে বিদেশ ফেরত প্রভাবশালী ভূমিদস্যু শফিক। সুযোগ পেলেই সে মসজিদ মাদ্রাসার নামে লেখা সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে ব্যক্তি মালিকানা, পৈত্রিক সম্পত্তি, রাস্তা ও নদীর পাশাপাশি জমিও দখল করে নিচ্ছে।
এই ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে সদর থানায় একাধিক অভিযোগ ও জিডি করার পরেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। রহস্যজনক কারণে উল্টো অসহায় ও ভুক্তভোগি পরিবারকে বিনা ওয়ারেন্টে তুলে এনে থানায় ২৪ ঘন্টা আটকে রেখে মিথ্যা মামলা দিয়ে চালান দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে ভুক্তভোগি প্রতিবন্ধী পরিবারের। রহস্যজনক জটিলতার কারণে তাকে গ্রেফতার করছে না। অথচ পুলিশকে ঐসব আসামিকে গ্রেফতার না করে তাদের সাথে বসে গল্প করতে দেখা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েক বছর আগে রামুর আ.লীগ নেতা ইউনুচ রানা চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির মালিকানাধীন ঘাটপাড়া এলাকার জমি রাতের অন্ধকারে অবৈধভবে দখল করে দেওয়াল নির্মাণ করে চিহ্নিত ভূমিদস্যু শফিক। সরকারী দলের নেতা হয়েও নিজের জমির দখল ঠেকাতে পারেননি ইউনুছ রানা। ভূমিদস্যু শফিক এতই ক্ষমতাধর যে, পরে সরকারি বিভিন্ন দপ্তর ছাড়া প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় পর্যন্ত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাননি তিনি।
সম্প্রতি আদালতের দেয়া ১৪৪ ধারা অমান্য করে খরুলিয়া মাষ্টার পাড়া এলাকায় মানসিক প্রতিবন্ধী পরিবার আবুবক্কর ছিদ্দিকের ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় বসতভিটার ২৯ শতক জমি দখলের জন্য একাধিকবার হামলা-চালায় ওই প্রতিবন্ধী পরিবারের উপর। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ওই দখলে বাঁধা প্রধানের কারণে পুলিশের আর্শীবাদে মিথ্যা মামলায় মা-মেয়েকে ফাঁসিয়ে দিয়ে ৮জনকে আসামী করে দু’জনকে জেলে পাঠানো হয়েছে। ভূমিদস্যু শফিকের অব্যাহত হুমকিতে ভীত সন্তন্ত্র হয়ে পড়েছে ওই প্রতিবন্ধী পরিবার। শফিকের ছত্রছায়ায় পুলিশের হুমকি-ধমকিতে ভুক্তভোগী পরিবারটি ভয়ে স্থবির হয়ে পড়েছে। নীরব কান্নায় বোবা হয়ে গেছে প্রতিবন্ধী আবু বক্করের পুরো পরিবার।
আরেকটি সূত্র জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে সদরের ঝিলংজা খরুলিয়া মুন্সিবিলের প্রবাসী রফিক ও মৃত ছৈয়দ নুরের স্ত্রীর মার্কেটসহ জায়গা দখল করে নেন ভূমিখেকো শফিক। কয়েকদিন পূর্বে ঘাট পাড়ার মৃত মনিরুজ্জামানের বসতভিটে দখল করে নেয়। পরে কিছুদিন যেতে না যেতে মাদ্রাসা নির্মাণের নামে একই এলাকার আয়াছ সওদাগরসহ আরোও কয়েকজনের কৃষি জমি জোরপূর্বক বালি ভরাট করে দখল করে রেখেছে।
শুধু তা নয়, ভূমিদস্যু শফিক নিজ চাচা ভুলুর জমি দখল করতে পর্যন্ত দ্বিধা করেনি, যার কালণে তিনি স্টোক করে মারা যান। একই এলাকার আবুল হাশেম ও তার অসহায় পরিবারের জমি দখল করে নেন। শহরের বাহারছড়া এলাকায় ভুমিদস্যু শফিকের বাসভবনের পাশর্^বর্তী হওয়ায় নুরুচ্ছফা নামের এক ব্যাক্তির জায়গা জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চলমান রয়েছে। এছাড়া ভূমিদস্যু শফিকের হুমকিতে এবং জমি হারানোর সংখ্যায় ওই ব্যাক্তি কিছুদিন যাবত মানসিক ভারসম্যহীন হয়ে পড়ে বলে জানা গেছে।
কেউ জমি ফেরত চাইলে তার বাড়িতে গিয়ে শফিকের সন্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে আসে। ভূমিদস্যু শফিকের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়। বর্তমানে খরুলিয়াসহ সদরের বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ লোকজন আতঙ্কের মধ্যে জীবন যাপন করছে।
অভিযোগ রয়েছে, ভূমিদস্যু শফিক জামায়াত শিবিরের একসয়ের দূর্ধর্ষ ক্যাডার। মধ্যখানে বিদেশে অবৈধ টাকার পাহাড় বানিয়ে দেশে ফিরে সরকার দলীয় এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় চলছেন। নিজের স্বার্থে দখল-বেদখল জমির পাহাড় বানিয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। ভুক্তভোগি ও সাধারণ মানুষ জানায়, শফিকের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী আইনের কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে এলাকায় এখন ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। তারা এ সমস্ত সন্ত্রাসীদের আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাস্তক্ষেপ কামনা করেন।
খরুলিয়া মাস্টার পাড়ার বাসিন্দা সাবেকুন্নাহার নামে ভুক্তভোগী জানান, বছর দেড়েক আগে এলাকায় বেশকিছু জমি কিনে শফিকুল ইসলাম। কিছুদিন যেতে না যেতেই তাদের বসতভিটার উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে তার। তাদের বাবা আবু বক্কর মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় মা সাজেদা বেগম সন্তানদের নিয়ে কোন রকম খেয়ে-পরে জীবন যাপন করছেন। ইতোমধ্যে নামমাত্র মূল্যে তার ভিটাটি বিক্রি করতে নানাভাবে হয়রানি শুরু করে ভূমিদস্যু শফিক। কিন্তু প্রস্তাবে বসতভিটা বিক্রি করতে অপারগতা প্রকাশ করায় পুলিশকে ব্যবহার করে হয়রানি শুরু করে চিহ্নিত ভূমিদস্যু শফিক।
তিনি আরও জানান, তাদের বাবা আবু বক্কর দীর্ঘদিন ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। এই সুযোগে গত ৪ এপ্রিল সাজেদার বাড়িতে হামলা চালায় ভূমিদস্যুরা। এতে তাকে (সাবেকুন্নাহার) শ্লীলতাহানিরও চেষ্টা করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে ভূমিদস্যুর পক্ষে পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। উল্টো ভুক্তভোগি সাজেদার পরিবারকে হুমকি দিয়ে চলে যায় পুলিশ।
এরপর ১৬ এপ্রিল রাতে ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের নির্দেশে তার সহযোগী নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে রাতের অন্ধকারে আবারও সাজেদার বসতভিটায় হামলা চালায় ভূমিদস্যুরা। এসময় ভাংচুর চালিয়ে গাছপালা কেটে নিয়ে যায় তারা। দ্রুত বাড়ি ছেড়ে না গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
তারা অভিযোগ করেন, এঘটনায় পুলিশ অসহায় ভুক্তভোগীদের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো ভূমিদস্যুর পক্ষ নেন। ভূমিদস্যুর পক্ষে গিয়ে বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল তিনটার দিকে সাজেদা খানম (৬০) ও তার মেয়ে সাজিয়া আফরিনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় সদর মডেল থানা পুলিশ। কোনো ওয়ারেন্ট বা অভিযোগ ছাড়াই তাদেরকে আটক করে। পরে বুধবার রাতে ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের ভাই আবদুর রহিম বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মিথ্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে পুলিশ তাদেরকে কারগারে পাঠিয়েছে।
এরকম ঘটনা একটি নয়, ঘটছে অহরহ। জুলুমবাজি থেকে পরিত্রাণ চায় ভুক্তভোগিরা। এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে পাওয়া যায়নি।
মন্তব্য করুন