মাহাবুবুর রহমান :
কক্সবাজারের বৃহত্তর ঈদগাঁওতে কয়েক’শ পাহাড় মাটির সাথে মিশে গেছে। রাতে আধারে নয় বরং দিনের আলোতেই প্রকাশ্য অর্ধশতাধিক স্কেভেটর দিয়ে পাহাড়ের মাটি কাটা হচ্ছে। আর এসব মাটি কয়েক’শ ডাম্পার গাড়ী দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রেল লাইন প্রকল্পের রাস্তা তৈরির কাজে।
শুধু রেল লাইন নয় সরকারি অগ্রাধিকার প্রকল্পে দোহাই দিয়ে মাটি খেকোরা নিজেদেরে স্বার্থেও মাটি বিক্রি করছে। তবে প্রকল্প কর্মকর্তাদের দাবী, রেল লাইন প্রকল্পে পাহাড়ের মাটি ব্যবহারের কোন নিয়ম নেই। মাটির জন্য আলাদা ভাবে ঠিকাদার দেওয়া হয়েছে। তারাই মাটি আনার দায়িত্বে আছে।
এদিকে স্থানীয়দের দাবী, বৃহত্তর ঈদগাঁওতে ইতিমধ্যে কয়েক’শ পাহাড় মাটির সাথে মিশে গেছে। আর যারা পাহাড় কাটছে তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেই মুখ খুলতে পারছেনা। অন্যদিকে এসব দেখাশোনা করা দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানও আগে থেকেই ম্যানেজ হয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
ঈদগাও এলাকার কবিরুল আলম, মজিবুল ইসলাম, শেফায়েল আলম সহ অনেক সমাজ সেবক বলেন, এখনো গ্রীস্মকাল আসেনি। তবে এখন থেকে গ্রামে যে পরিমান গরম পড়ছে। তাতে জানিনা সামনের দিন কিভাবে যাবে। তারা বলেন, গত কয়েক মাসের মধ্যে বৃহত্তর ঈদগাওকে কমপক্ষে ১০০ টি উঁচু পাহাড় একেবারে মাটির সাথে মিশে গেছে। বিশেষ করে রশিদ নগর নতুন বাজারের পূর্ব পাশে ইতিমধ্যে ২০ টির উপরে পাহাড় কাটা হয়েছে।
এছাড়া ইসলামপুর এবং ইসলামাবাদের যৌথ সীমানয় ফকির বাজার নামক এলাকায় পাহাড়ের মাটি কেটে স্তুপ করা হয়েছে। সেখানে আশে পাশের অসংখ্য পাহাড় থেকে দিন রাত বড় বড় স্কেভেটর দিয়ে এসব মাটি কাটা হচ্ছে। এছাড়া টুনটুনি বাজারের পাশে গেলে দেখা যাবে বিরাট পাহাড় কেটে মাটিরসাথে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইচুপের খিল, বোয়ালখালী, ডুলাহাজারা, রং মহল সহ মহাসড়ক হতে পূর্ব পাশে যেসব রাস্তা গেছে সব দিকে গেলেই দেখা যাবে পাহাড় কাটার ভয়াবহ দৃশ্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, আমাদের গ্রামের সাধারণ গরীব কৃষক পানের বরজ করার জন্য পাহাড় থেকে সামান্য মাটি সরালে বন বিভাগের লোকজন এসে তাকে মামলার ভয় দেখায়। এখন কয়েক শত পাহাড় একেবারে মাটি সাথে মিশিয়ে দিচ্ছেÑসেটার দেখার কেউ নেই। আর যারা দেখবে তাদেরকে সন্ধ্যা হলে মাটি খেকোদের সাথে কালো গ্লাসের রেষ্টুরেন্টে দেখা যায়। ভয়েও কেউ কথা বলছে না। তবে এভাবে পাহাড়গুলো শেষ হয়ে যাওয়াতে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।
ইসলামাবাদ ইউনিয়নের বোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা কলেজ ছাত্রী নাসরিন আক্তার বলেন, আমি পড়া লেখার কারনে কক্সবাজার শহরে থাকি। মাঝে মধ্যে গ্রামে যাই। গত মাসে গ্রামে গিয়ে আমি অবাক। কারন আমার বাড়ির পাশে যেসব উচু পাহাড় ছিল সেগুলো এখন নেই। সব দেখছি মেশিন নিয়ে কেটে শেষ করে ফেলা হয়েছে। এই পাহাড়গুলো দেখতে খুবই সুন্দর ছিল এবং এসব পাহাড়ের কারনে প্রাকৃতিক পরিবেশটা সুন্দর লাগত।
একই এলাকা শাসমুল ইসলাম নামে প্রবীন এক মুরব্বি বলেন, আমার বয়স এখন ৭০ বছরের বেশি। এই দীর্ঘ জীবনে এভাবে পাহাড় কাটতে কাউকে দেখিনি।
এ সময় ঈদগাও ইসলামপুর, বোয়ালখালী, ঈদগাঁও সদর সহ বেশ কিছু এলাকা কর্মরত রেল লাইন প্রকল্পের কর্মকর্তা আমিরুজ্জামান, নাছির উদ্দিন, মিরাজ সহ অনেকে বলেন, আমাদের কাজ মাটি আসলে সেটা বুঝে নিয়ে কাজ করা। মাটি কোথা থেকে আসছেÑসেটা দেখার বিষয় আমাদের না। আর মাটি আনার জন্য আলাদা ঠিকাদার দেওয়া আছে। তবে এ বিষয়ে তাদের প্রকল্প পরিচালক সৌরভ দের সাথে যোগাযোগ করতে বললেও তার নাম্বার অসংখ্য বার ফোন দিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন, রেল লাইন প্রকল্পের কাজে পাহাড়ের মাটি দেওয়ার কোন নিয়ম নেই। কোন ভাবেই প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন