মাহাবুবুর রহমান.
যে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ বা ঘূর্ণিঝড় আসলেই প্রথমে নজরে আসে উপকূলে থাকা আশ্রয় কেন্দ্র বা সাইক্লোন সেল্টার গুলোর উপর। এছাড়া বছরের বাকি সময় এই আশ্রয় কেন্দ্র গুলো থাকে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে সেখানে তারা গুরু মুরগীর খামার থেকে শুরু করে অনেকে গুদাম হিসাবে ও ব্যবহার করে। ফলে বেশির ভাগ সাইক্লোন সেল্টার হয়ে পড়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ব্যবহারের অনুপযোগি। সে জন্য অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে যে চাননা বলে জানান। এখন থেকে সাইক্লোন সেল্টার গুলোর নিয়মিত তদারকি হবে জানিয়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বলেন,এই বিষয়টি অনেকাংশে সত্যি তবে এখন থেকে এই সব বিষয় যাদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব রয়েছে তাদের দায়িত্ব অবহেলা হলেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চকরিয়া কোনখালী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন(৬৫) বলেণ আমাদেরকে গতকাল থেকে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে কিন্তু যে সাইক্লোন সেল্টার নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সেখানে একরাত থাকারও কোন পরিবেশ নেই। চারিদিকে ময়লা আবর্জনা দূর্গন্ধ। সেখানে নীচে গরু ছাগল রাখা হতো আর উপরে বোটের জাল রাখা হতো। কোন জানালা নেই বাথরুম নেই লাইট নেই কিভাবে সেখানে মানুষ থাকবে ? একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করে বলেণ,কোন ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসলেই সাইক্লোন সেল্টারগুলোর খবর নেওয়া হয়। বাকি সময় সেগুলো থাকে প্রভাবশালীদের দখলে। আবার কিছু আছে একেবারেই অকেজো সেখানে মাদকসেবীদের আড্ডার কারনে মানুষ থাকা কোন ভাবেই সম্ভব না।
এদিকে সদর উপজেলা চৌফলদন্ডি ইউনিয়নের রমজান হোসেন,নাছির উদ্দিন,মোবারক হোসেন বলেন,সরকার সাইক্লোন সেল্টার করে দিয়েছে ভাল কথা কিন্তু সে গুলোর রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কেউ সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করে না। যে সব সাইক্লোন সেল্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজে ব্যবহার হয় সে গুলো কিছুটা ব্যবহারের উপযোগি আছে, তবে কিছু আছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে, সেখানে অনেকে মুরগীর খামার,গুরুর খামার,ট্রলার বা বোটের জাল রাখার বা মেশিনের যন্ত্রাংশ রাখার গুদাম হিসাবেও ব্যবহার করে। ফলে প্রাকৃতি দূর্যোগের সময় সে গুলো আর মানুষের ব্যবহারের উপযোগি থাকেনা।
এদিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের রুপবতি এলাকার আজিম উদ্দিন,শামসুল আলম বলেন আমাদের এলাকাতে কয়েক টি সাইক্লোন সেল্টার আছে সেগুলো এমনি ব্যবহার করে কিন্তু অনেক পুরাতন হওয়াতে খুবই ঝুকিপূর্ন। আর সাইক্লোন সেল্টার গুলোতে বাথরুম নাই,পানি নাই,বিদ্যূৎ নাই তাই বেশির ভাগ মানুষ সাইক্লোন সেল্টার ব্যবহার করতে চায়না।তাছাড়া শুধু সাইক্লোন সেল্টারে থাকলে হবে না সেখানে খাবে কি? তবুও মানুষের বিপদের আশ্রয় স্থল হিসাবে সাইক্লোন সেল্টারগুলো খুবই দরকারি তাই সে গুলোকে সারা বছর সংস্কার করা দরকার বলে মনে করেন তারা।
মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খোকন বলেন,আমার ইউনিয়নে ৯ টি সাইক্লোন সেন্টার আছে এর মধ্যে বেশির ভাগই ব্যবহারের উপযোগি। কারন বেশির ভাগই স্কুলের আওতায় আছে বরং যে গুলোতে কেউ ছিলনা সে গুলোই ব্যবহারের অনুপযোগি। এ রকম দুইটি আছে সে গুলো গতকাল থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কক্সবাজার সদর উপজেলা পিএমখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুর রহিম বলেন,সাইক্লোন সেল্টারগুলো পুরাতন মডেলে তৈরি। সেখানে বর্তমানে প্রয়োজনীয় অনেক সুবিধা নেই। তাই সে গুলোকে কিছুটা সংস্কার করতে পারলে ভাল হতো।তবে যদি ব্যবহার না করে তাহলেই সমস্যা বেশি হয়। তাই সব সাইক্লোন সেল্টার সারা বছর কোন না কোন কাজে ব্যবহার করতে হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে কক্সবাজার রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন,আমাদের তত্বাবধানে ৮৩ টি সাইক্লোন সেল্টার আছে,এটা সঠিক যে বেশ কিছু সাইক্লোন সেল্টার প্রভাবশালীদের দখলে আছে। এখন থেকে আমরা প্রতিনিয়ত সব বিষয় তদারকি করবো। এবং প্রশাসনের সহযোতিা নিয়ে সব সাইক্লোন সেল্টার উদ্ধার করা হবে।
আলাপ কালে মহেশখালী উপজেলা চেয়ারম্যান শরীফ বাদশা বলেন,উপজেলার মাতারবাড়ি,ধলঘাটা,কুতুবজোম এলাকা উপকূলীয় এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে বেশির ভাগ সাইক্লোন সেল্টার ব্যবহারের উপযুক্ত আছে। কারন বেশির ভাগই স্কুলের কাজে ব্যবহার হয়। যদি খালী পড়ে থাকে তাহলে মাদকসেবী বা অন্য কোন অপরাধিদের আস্তানায় পরিণত হয়।আমি মনে করি সাইক্লোন সেল্টার আরো বাড়ানো দরকার। এবং সেখানে বেশ কিছু সুবিধা সম্পন্ন ভাবে করা প্রয়োজন।
এ ব্যপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আশরাফুল আফসার বলেণ,অনেক সময় শুনতে পায় সরকারি সাইক্লোন সেল্টার প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা ব্যবহার করছে এটা সত্যি। এখন থেকে সব কিছু নিয়মিত তদারকি করা হবে। এবং এসব বিষয়ে যারা দেখভালের দায়িত্ব আছে তাদের কর্তব্য কাজে গাফেলতী পাওয়া গেলে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন