কক্স৭১
কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমার ফিরে গেল প্রতিনিধি দল। গত মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) ও বুধবার (১ নভেম্বর) তৃতীয় দফায় প্রত্যাবাসন ইস্যুতে টেকনাফে আসেন ৩৬ সদস্যের মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল। দুইদিন ধরে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। যাচাই-বাছাই করেন প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের। কিন্তু বুধবার (০১ নভেম্বর) বিকালে কোন সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমার ফিরে যান প্রতিনিধি দলটি।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ আসে। এখানে দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে তারা রোহিঙ্গাদের ১৮০ টি পরিবারের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা করে। পরে সন্ধ্যায় তারা কোন ধরণের সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিয়ানমারে ফিরে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হবে। যা ২০১৮ সালে দুই দেশের চুক্তিতে উল্লেখ্য রয়েছে। আমরা জল ও স্থল পথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। আশা করি, দুই পক্ষের কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের মধ্যে যে আস্থার সংকট রয়েছে, সেটি দূর হবে এবং অচিরেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর স নাইং। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত আরআরআরসি মো. সামছু-দ্দৌজাসহ এপিবিএন পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যাবাসন চুক্তির পর, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ও ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা ভেস্তে যায় মিয়ানমারের ছলচাতুরিতে। এরপর চলতি বছর চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। ৩ দফায় দেশটির প্রতিনিধি দল আসলেও প্রশ্নের মুখেই রয়েছে মিয়ানমারের অবস্থান।
এর আগে চলতি বছর দু’বার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং গত ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সাথে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি এসেছিলেন। তারমধ্যে গত ৫ মে বাংলাদেশের ৭ সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে কয়েক দফায় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। তারমধ্যে মাত্র ১ লাখ ১ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা ভেরিফাই করে মিয়ানমার সরকার। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়রত রয়েছেন। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক অজিত দাশ বলেন, বার বার ভেস্তে যাচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া। বাংলাদেশ সরকার আন্তরিক হলেও মিয়ানমারের গাফিলতিতে প্রত্যাবাসন নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। এতে নিরাশ হয়ে পড়েছেন রোহিঙ্গারা। রোহিঙ্গাদের অভিমত, মিয়ানমার প্রত্যাবাসন নিয়ে নাটক শুরু করেছে। আসলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক নয় জান্তা সরকার।
মন্তব্য করুন