মাহাবুবুর রহমান.
কক্সবাজার কারাগারে সুস্থ্য বন্দিকে টাকা পেলে মুহুর্তের মধ্যে অসুস্থ্য সাজিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে কারা হাসপাতালে সিটের ব্যবস্থা করে দেন সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তাররা। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়ি এবং তাদের আত্বীয় স্বজন এবংকিছুটা মর্যাদাশীল ব্যাক্তি কারাগারে গেলে তাদের কারা হাসপাতালের বিশেষ সুবিধা করে দেন ডাক্তার এবং সেখানে কর্মরত দায়িত্বশীলরা। আর কারা হাসপাতালে একটি সিটে একজন রোগি থাকার নিয়ম থাকলেও সেখানে একটি সিটে অসংখ্য রোগিকে রাখার জন্য সার্টিফিকেট দেন তারা। সম্প্রতী দূর্নীতি দমন কমিশন দুদকের পরিদর্শনে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে তাই পরিদর্শনে বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি কারা হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তারের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার জেলা কারাগারে হাসপাতালে সিট বানিজ্য করে বিপুল টাকা আয় করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে ডাঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতী কক্সবাজার কারাগারের বেশ কিছু অনিয়ম দূর্নীতির বিষয়ে পত্র পত্রিকায় তথ্য বহুল লেখালেখির পরে দেশ ব্যাপী আলোচনায় আসে কক্সবাজারের কারাগারের অনিয়ম বিষয়ে। বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসায়িদের বিশেষ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোচনায় আসে। এদিকে রবিবার বিকালে কক্সবাজারে কারাগারে গিয়ে সদ্য জামিনে বের হওয়া দু জনের কাছ থেকে ভেতরের পরিস্থিতি জানতে চাইলে তারা বলেন,শুনেছি কিছুদিন ধরে কারাগার নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা চলছে তবে ভেতরে সে সব কিছুর প্রভাব নেই। আর সব চেয়ে সমস্যা হচ্ছে কারা হাসপাতালে সেখানে এখনো সব ইয়াবা ব্যবসায়িদের দখলে। মূলত ডাক্তাররাই টাকা পেলে মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে হাসপাতালের সিটে তাদের থাকার ব্যবস্থা করে দেয় আসল দোষী হচ্ছে তারা। কারন ডাক্তার সার্টিফিকেট না দিলে কারাগারের কর্মকর্তারা কিছুই করতে পারেনা। আমি মনে করি প্রথমে তাদের ধরা উচিত। আর প্রতিটি সিটে ৪/৫ জন করে দিনে রাতে পালা করে থাকে। সবাই খুবই সুস্থ্য সবল কিছু বছরের পর বছর অসুস্থ্য বলে হাসপাতালের সিটে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন,শুনেছি ডাক্তার আলমগীর নামের সেই ডাক্তার টাকা পেলেই যে কোন সুস্থ্য মানুষকে অসুস্থ্য বলে হাসপাতালে সিটের ব্যবস্থা করে দেয়।আর ফকরুল নামের আরেক জন আছে উনি সব কিছু দেখাশুনা করে। উনার কথা ছাড়া হাসপাতালেও কেউ থাকতে পারে না।
একই সময় সদ্য মুক্তি পাওয়া আরো একজন বলেন,২ মাস আগে আমার সামনে একজন স্ট্রোককরে মাটিতে গড়াগড়ি করছে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি বরং সব ইয়াবা ব্যবসায়িরা সিটে থাকে আর করে ম্যানেজ করে দেয় ডাক্তাররা। তিনি বলেন,আসল অপরাধি তারা।
এদিকে কক্সবাজার শহরের বাহারছড়ার আবছার কামাল বলেন,দীর্ঘ দিন ধরে শুনে আসছি কারা হাসপাতালের অনিয়ম দূর্নীতির কথা। সেখানে কোন সাধারণ মানুষ বা প্রকৃত রোগি থাকতে পারেনা। আমার কাছে তথ্য আছে একটি হাসপাতালের সিট পেতে লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছে এরকম মানুষ ও আছে। আবার কিছুদিন পর সিট কেটে দেয় আবার টাকা দিলে সিট দেয়। আর অনিয়মের মূলে আছে ডাঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে ডাঃ মহিউদ্দিন মোঃ আলমগীর মুলত বক্ষব্যাধী হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট। তবে বেশির ভাগ সময় ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন কিভাবে হয় সেটা অনেকের বোধগম্য নয়। যেহেতু সিভিল সার্জন অফিসে নিজস্ব মেডিকেল অফিসার ডাঃ রঞ্জন বড়–য়া আছে।
এদিকে বক্ষব্যাধী হাসপাতালের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে তিনি বেশির ভাগ সময় নিজের সরকারি দায়িত্ব পালন করেন না। অফিস সময়ে শেভরণের ৪ তলায় প্রাইভেট চেম্বার করেন। কোন সময় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে আসেন না।
জানা গেছে বর্তমানে দুদকের মামলায় কক্সবাজার কারাগারে থাকা স্বাস্থ্য বিভাগের ঢাকার এক কর্মকর্তাকেও বিশেষ সুবিধা দিতে নানান পায়তারা চলছে।
এদিকে কারাগারে সিট বানিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে ডাঃ মহিউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন,আমি কয়েকদিন আগে সেখান থেকে পদত্যাগ করেছি। এখন ফকরুল নামের একজন দায়িত্ব পালন করে আর আমি কোন অনিয়ম করিনি। তবে ফকরুল ইসলাম দাবী করেন আমি সামান্য ফার্মাসিস্ট যা করেন সব ডাক্তার সাহেব করেন উনার লেখা ছাড়া আমি কিছুই করতে পারিনা। যা করেন সব উনিই করেন।
এদিকে দূর্নীতি দমন কমিশনের চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেণ,কক্সবাজার কারাগারের অনিয়ম দূর্নীতি তদন্তে বেশ কিছু অনিয়ম পরিলক্ষিত হয়েছে এর মধ্যে ডাক্তারদের বিষয়টিও আছে। আমাদের তদন্ত প্রতিবেদনে ডাক্তার সহ সংশ্লিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছি। সেটা এখন আমাদের উর্ধতন কতৃপক্ষ অনুমোদন করলে বাকি ব্যবস্থা পরে হবে।
মন্তব্য করুন